এক উপজেলাতেই ১১০ কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা

টমেটোর রাজ্য রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা। এই উপজেলায় রাজশাহীর সবচেয়ে বেশি টমেটো উৎপাদন হয়। বছরে এই উপজেলা থেকে ১১০ কোটি টাকারও বেশি টমেটো কেনাবেচা হয় বলে জানা গেছে। যার সঙ্গে সরাসরি কৃষকরা জড়িত। ফলে টমেটো কৃষকদের কাছে অর্থকরি ফসল রূপে পরিগণিত হয়েছে। টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টমেটো জমিতে উৎপাদন হচ্ছে, জমি থেকেই বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় টমেটো চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে প্রতিবছরই এই উপজেলায় বাড়ছে টমেটো চাষের জমি। তবে এ বছর অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে কিছুটা কমেছে টমেটোর চাষ। তবে উৎপাদন ভালো হওয়ায় তা পুষিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।

এবছর রাজশাহী জেলায় টমেটো চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধু গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটোর চাষ হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। যা উপজেলা হিসেবে সিংহভাগ গোদাগাড়ী উপজেলায়। গত মৌসুমে ৩ হাজার ১৫ হেক্টর এবং ২০২১ সালে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছিল। তবে জেলায় মোট ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির মধ্যে গোদাগাড়ীর চাষ বাদ দিলে বাকি ২০০ হেক্টর সব উপজেলা মিলে টমেটো চাষ হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রাকিব জানান, টমেটো গেল ৬-৭ বছর ধরে এই অঞ্চলে চাষ হচ্ছে। আগে বাণিজ্যিকভাবে তেমন চাষ হতো না। বর্তমানে গোদাগাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে টমেটোর চাষ হচ্ছে। টমেটো চাষের পরে বিক্রির সুবিধা রয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জমি থেকে টমেটো কিনে নেন।

গোদাগাড়ীর গোপালপুরের শ্রী বলরাম কর্মকার বলেন, চাষিরা এবার বেশিরভাগ ৬৪২ প্রজাতির টমেটো চাষ করেছেন। এছাড়া অনেকেই অন্য জাতের টমেটোও চাষ করেছেন। তবে এবছর তুলনামূলক গাছে টমেটো কম। টমেটোর ভালো ফলন হয়নি। তবে দাম মোটামুটি ভালো।

টমেটো ব্যবসায়ী শামসুল আলম বাবু জানান, গত ১৫ দিন আগেও টমেটোর বেশি দাম ছিল। এখনও ভালো দাম আছে। তিনি প্রতিদিন একট্রাক করে টমেটো পাঠান। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লায় ট্রাকে করে টমেটো পাঠান তিনি। তার দাবি তুলনামূলক ভালো দাম এই বাজারগুলোতে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ জানান, টমেটো চাষের মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (চার মাস) ধরা হয়। এই অঞ্চলে দুবার টমেটোর চাষ হয়। এরমধ্যে গ্রীষ্মকালীন টমেটো রয়েছে। এই টমেটোর ভালো দাম পান চাষিরা। এবছর এই টমেটোগুলো ১৫ থেকে ১৬০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে বাজারে।

তিনি বলেন, এবছর গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটোর চাষ হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে টমেটোর উৎপাদন ধরা হয় ২৫ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে এবছর টমেটো উৎপাদন হবে ৫৬ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন। এই টমেটোর গড় মূল্য ২০ টাকা কেজি ধরা হলে দাম দাঁড়ায় ১১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এতে ধরা যায় ১১০ কোটি টাকার বেশি টমেটো কেনাবেচা হয়। শুধু তাই নয়, টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র অস্থায়ীভাবে ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে।

(ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ইএইচ/জেডএম)