মুজিবভক্ত ইব্রাহিমের শেষ ইচ্ছা 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:২৩

মো. ইব্রাহীম হোসেন (৭৬) বার্ধক্যজনিত কারণে বাড়িতে শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছেন। ছোটবেলার খেলার সাথি, ছাত্রজীবনের বন্ধু, দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছরের কর্মজীবন ও দুরন্ত শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি হাতড়িয়েই দিন কাটছে তার।

২০০৯ সালে স্ট্রোক করার পর অনেকেরই নাম ভুলে গেছেন। এক ছেলে এক মেয়ের জনক মো. ইব্রাহীম স্বাস্থ্য বিভাগে ৩০ বছর চাকরি করতেন। এখন ছেলে ও নাতিরাই তার দেখাশোনা করেন। জীবনে চাওয়া পাওয়া নিয়ে তেমন কোনো আক্ষেপ না থাকলেও আক্ষেপ শুধু একটি লাঠি নিয়ে।

বঙ্গবন্ধুর জন্য কেনা লাঠিটি গত ৬০ বছর আগলে রেখেছেন তিনি। পুরোনো স্মৃতি মনে পড়লে এখনো বের করে নাড়াচাড়া করে দেখেন।

হরিণের শিং দিয়ে তৈরি সাহেবি লাঠিটি তিনি খুলনা থেকে কিনেছিলেন বাঙালির রাখাল রাজা স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমানকে উপহার দেওয়ার জন্য।

৬০ বছর আগে শেখ মুজিবকে আজও স্বপ্নের নায়ক ভাবেন। নাতিদের শোনান তার যৌবনের স্মৃতি গল্প।

মো. ইব্রাহীম হোসেন বর্তমানে মাগুরা জেলার সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের মৃত মোলাজ হোসেনের ছেলে। মাত্র দেড় বছর বয়সে মারা যায় বাবা, ৩ বছর বয়সে মারা যায় মা। বড় ভাইয়ের হাতে অনেক কষ্টে মানুষ হয়েছেন। মো. ইব্রাহীম হোসেন পড়া লেখা করেছেন মাগুরা মডেল স্কুলে।

১৯৬৬ সালে মাগুরার নোমানীর ময়দানে শেখ মুজিবের একটি জনসভার আয়োজন করা হয় । সুযোগটি কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন ইব্রাহিম। স্বপ্নের নায়ক শেখ মুজিবকে উপহার দেওয়ার জন্য কিশোর ইব্রাহীম খুলনা থেকে হরিণের শিং দিয়ে তৈরি একটি লাঠি কিনে আনেন। জনসভার দিন শেখ মুজিব এলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান। ফলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় ইব্রাহিমের। সেদিন উপহারটি তার হাতে তুলে দেওয়া হয়ে ওঠেনি। এর পর ১৯৬৯ সাল ও সত্তরের নির্বাচনের সময়ও বঙ্গবন্ধু মাগুরায় আসেন। কিন্তু তার হাতে উপহারটি তুলে দেওয়া হয়নি ইব্রাহিমের। এরই মধ্যে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সে সময় মাগুরার আলমখালী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের খাদ্য গুদামের পাহারাদার হিসেবে কাজ করেছেন ইব্রাহিম। তার এক চাচাতো ভাই ওহিদুল ইসলাম শৈলকুপার কামান্নায় পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।

দেশ স্বাধীনের পরে ঢাকার ৩২ নম্বরের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করলেও উপহারটি দেননি। মাগুরার কোনো মঞ্চে উপহারটি তুলে দেওয়ার জন্য যত্ন করে রেখে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হন। দেশের প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। বঙ্গবন্ধুর জন্য কেনা উপহারটি আজীবনের জন্য বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে।

১৯৭২ সালে ঝিনাইদহ শহরে বিয়ে করেন। ১৯৮২ সালেএই শহরেই জমি কিনে বাড়ি করে স্থায়ী হন ইব্রাহীম হোসেন। স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদ থেকে ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৯ সালে স্ট্রোক করে হারিয়েছেন অনেক স্মৃতি ও স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা।

ইব্রাহীম হোসেন বলেন, আমি অনেক কিছু ভুলে গেছি। বন্ধু-সাথীদের নাম মনে নেই। লাঠিটি বের করে প্রায়ই দেখি। আমার একটাই আক্ষেপ। বঙ্গবন্ধুর জন্য কেনা উপহারটি তাকে দিয়ে যেতে পারলাম না। তার উত্তরাধিকারী কারও হাতে দিতে পারলেও শান্তি পেতাম।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার হাতে লাঠিটি দিতে পারলে আমার আর কোনো আক্ষেপ থাকতো না। বঙ্গবন্ধুভক্ত এ বৃদ্ধ বলেন, শেখ সাহেব আমাকে ইব্রা বলে ডাকতেন। তার সাথে অনেকবার দেখা হয়েছে। মাগুরায় ভোটের প্রচারণা করেছি তার সাথে।

ইব্রাহীম হোসেনের একমাত্র ছেলে কলেজ শিক্ষক দীপু বলেন, আমার বাবা আমাদের কাছে প্রায়ই আক্ষেপ করেন আর লাঠিটি বের করে দেখেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতে উপহারটি তুলে দিতে চান তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাসহ প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের কাছে বিনীত অনুরোধ আমার বাবা অন্তঃপ্রাণ মুজিবভক্ত ছিলেন। তার শেষ জীবনের এই ইচ্ছাটা যেন পূরণ করেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :