বিচার বিভাগ গণভবনের গতিতে চলছে: রিজভী 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:২৭ | প্রকাশিত : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:৪০
ফাইল ছবি

বিচার বিভাগ আইনের গতিতে নয়, চলছে গণভবনের গতিতে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা আর আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে গেছে। পৃথক কোনো সত্তা নেই। দেশে কোনো আইন নেই। সব শেখ হাসিনার ইশারায় চলছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ মামলা দায়ের আর অর্ধকোটি আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশে।

সোমবার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, কারাগারে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে সরকারের ব্লুপ্রিন্টে। বিনা কারণে বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার, নির্বিচারে বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর নেতাকর্মীদের কারাগারে আটক ও নির্যাতন, ইচ্ছামাফিক জেল ও জামিন বিচার বিভাগের অস্তিত্বকেই বিলীন করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পূর্ণ মিথ্যা সাজানো মামলায় জেলে পুরে এবং সারাদেশে বাড়িঘর ছাড়া করে তাড়িয়ে বেড়ানোর গোমর ফাঁস করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। গতকাল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সিট ভাগাভাগির উদ্ভট তামাশার নির্বাচনকে নির্বিঘ্নে-কণ্টকমুক্ত করার জন্যই বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা চিন্তা-ভাবনা করেই এই কাজ করেছি। তাদেরকে জেলে না ভরলে দেশ অচল হয়ে যেতো। হরতালের দিন গাড়ি চলতো না।

ড. আবদুর রাজ্জাক সাহেব আরও বলেছেন, বিএনপিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তারা নির্বাচনে আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে। শুধু পিছিয়ে দেওয়া নয়, বলা হয়েছে সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এমনকি একরাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়নি।

এতক্ষণে-অরিন্দম কহিলা বিষাদের মতো কৃষিমন্ত্রীর এই হরষের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা করে পুলিশি তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে চলমান যত সহিংসতা, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, হুলিয়া, হত্যা, বিএনপিসহ বিরোধী দলের বাড়িঘরে হামলা-তল্লাশি, ভাঙচুর-গৃহছাড়া-আটক বাণিজ্য সবকিছু শেখ হাসিনার পূর্ব পরিকল্পিত। শেষ পর্যন্ত এই প্রভাবশালী মন্ত্রী হাটে হাঁড়ি ভেঙে স্বীকার করলেন যে, দেশের আইন-আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন-কোর্ট কাচারি-বিচার-আচার সবকিছুই আওয়ামী মাফিয়া সরকারের হাতে বন্দি।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে কার্যত আওয়ামী লীগের একটি ইউনিটে পরিণত করা হয়েছে। পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে, খুন-সন্ত্রাসের আসামিদেরকে বেছে বেছে সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে গত ১৫ বছর ধরে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসনের আওয়ামী নমুনা কৃষিমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে। ২০ হাজার নির্দোষ নেতাকর্মীকে নির্বিঘ্নে নির্বাচন করতে পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা দেশের নির্দোষ নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। জামিনের অধিকারও খর্ব করা হয়েছে। এই শেখ হাসিনা চাইলে গ্রেপ্তারকৃতদের এক রাতেই ছেড়ে দিতে পারেন।

রিজভী বলেন, ২০ হাজার নিরপরাধ নেতাকর্মীকে নির্জলা মিথ্যা মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা এবং সরকারের সাথে সমঝোতা করলে এক রাতেই মুক্তি দেওয়া কোনো গণতান্ত্রিক দেশে, কোনো আইনের শাসনের দেশে এমনকি ডিক্টেটর শাসিত অনেক দেশেও সম্ভব নয়। এতে এটা প্রমাণ হয় বর্তমান আওয়ামী মাফিয়া সরকার পৃথিবীতে সর্বোচ্চ জুলুমের এক অদ্ভুত স্বৈরতান্ত্রিক এবং একনায়কতান্ত্রিক সরকার। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায় এই সরকারকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকার লিপ্সায় চার বারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে ফরমায়েশি রায়ে কারারুদ্ধ করে রেখে বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করছে একথাই শতভাগ সত্য। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে একটির পর একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে শেখ হাসিনার আদালতে। সব কিছুর হিসাব রাখছেন দেশের জনগণ। এই নজিরবিহীন অবিচারের বিচার একদিন হবেই হবে।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর গতকাল দেওয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রথিতযশা সাংবাদিক ও লেখক এম জে আকবর বাংলাদেশে এসে গতকাল এক সেমিনার শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিশিরাতের ভোট ডাকাত, ১৫ বছর বন্দুকের নলের মুখে জনগণের ঘাড়ে দৈত্যের মতো চেপে বসা গণবিচ্ছিন্ন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে স্তুতি আর প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন।

তার বক্তৃতা শুনে তার সম্পর্কে যারা অবগত তারা রীতিমতো বিস্মিত-হতবাক হয়েছেন। এম জে আকবর বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মুক্তি সংগ্রামের নেতা। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে দেখছি, তার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছে এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। শেখ হাসিনা জাতিকে শুধু উন্নয়নের দিকে নয়, চারটি মাত্রাবিশিষ্ট আধুনিকতার দিকে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশকে যারা নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাচ্ছে, তারা ভুলে যাচ্ছে যে বাংলাদেশ এখন ভীতু দেশ নয়। ভয় দেখালেই ভয় পাবে, এটা কাজে দেবে না।’ এছাড়া তিনি আরও বলেছেন যেটিতে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজসহ জনগণ হতভম্ব হয়েছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এম জে আকবরের মতো একজন প্রাজ্ঞ সাংবাদিক ও রাজনীতিক কি করে সবকিছু জেনেশুনেও একনায়কতন্ত্রের পক্ষে, ১৮ কোটি বাংলাদেশির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলেন। জনসমর্থনহীন শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকা আপনাাদের কি স্বার্থ নিশ্চিত করে? আপনাদের সমর্থনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এদেশে নিষ্ঠুর বর্বরতা চালাচ্ছেন। দখলদার শেখ হাসিনা দীর্ঘ দেড় দশকে বহুমাত্রিক লুটপাটের আধুনিকীকরণ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ফিলিপিনের ক্যাসিনোতে ঘুরে বেড়ায় শেখ হাসিনার তথাকথিত উন্নয়নের সরকারের বদান্যতায়।

আপনার উল্লিখিত মন্তব্য বাংলাদেশের জনগণকে অবজ্ঞা করার শামিল। ভারত কি তাহলে বাংলাদেশের জনগণকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকেই বন্ধুত্বের বন্ধনে আঁকড়ে রাখতে চায়? এম জে আকবরের মন্তব্য কর্তৃত্বসুলভ ও বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছাকে অসম্মান করা। বাংলাদেশ কোনো স্যাটেলাইট স্টেট নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোনো দেশের প্রোটেক্টরেট নয়। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা বঞ্চিত। চলমান আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং জনগণের মালিকানা জনগণকে ফেরত দেওয়া।

রিজভী আরও বলেন, আমরা তো ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাই না। বাংলাদেশি নাগরিকরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সমমর্যাদার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়াতে বিশ্বাস করে। আপনি একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক ও বিদ্বজ্জন। জনগণ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের ভোট চুরির দোসর হবে না ভারত। প্রতিবেশী হিসাবে এ দেশের ১৮ কোটি জনগণের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পক্ষে দাঁড়াবেন এটাই এদেশের মানুষ কামনা করে।

(ঢাকাটাইমস/১৮ডিসেম্বর/জেবি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মিরপুরে বিক্ষোভ 

দলের নির্দেশনা না মানলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে: নয়ন

শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আটক করতে হবে: আবু হানিফ 

বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয়, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান             

রাজধানীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা: ধামরাইয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাবিব গ্রেপ্তার

অনেক সচিব এখনও নাশকতার চেষ্টা করছে: রিজভী

আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য হুমকি: গোলাম পরওয়ার

দুর্গতদের জন্য ২০ কোটি টাকার ত্রাণ সংগ্রহ বিএনপির

এই দেশ চারবার স্বাধীন হয়েছে, আর লড়াই-বৈষম্য চাই না: ফয়জুল করীম

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :