পেঁয়াজের কেজি দোকানে ৯০, ভ্যানে ৮০ টাকা

তানিয়া আক্তার, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫৭ | প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:২২

পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়েছে। নতুন পেঁয়াজ দোকানে কেজিপ্রতি ৯০ এবং ভ্যানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুড়ি কাটা পেঁয়াজের উৎপাদন শেষ হয়ে যাওয়া, মোকামে দাম বেড়ে যাওয়া, নতুন হালি পেঁয়াজের বাজারে সরবরাহ না থাকা এবং রপ্তানি বন্ধসহ বিভিন্ন কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে আড়ৎদার ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ঘাড়েও পড়েছে বাড়তি চাপ। তবে পেঁয়াজের এই দাম স্থির থাকবে নাকি আরও বেড়ে যাবে সেই শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন তারা। এখনই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম না টানায় যাপিত জীবন প্রতিনিয়তই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে তাদের।

সোমবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউনহল মার্কেট কাঁচা বাজার এবং কারওয়ানসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে পেঁয়াজের এমন বাড়তি দাম এবং ক্রেতা ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে।

টাউন হল কাঁচা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা কসমেটিক বিক্রেতা রাফিল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ব্যাচেলর বাসার জন্য একসঙ্গে অনেক নিত্যপণ্য কিনতে হয়। চালের কষ্টের মধ্যে পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে। এখন এই দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে তা বলা যায় না। আমি কসমেটিক বেচি। প্রতিটি পণ্যের গায়ে দাম লেখা থাকে। কিছু লাভ হয়। কিন্তু নিত্যপণ্যের হুটহাট দাম বাড়িয়ে আমাদের বেহাল দশা করে দেয়।’

দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতারা জানান, মোকামে দাম বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি বন্ধসহ বিভিন্ন কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

বাজারের দোকানের পাশাপাশি ভ্যানে কিছুটা কমিয়ে রাখা হলেও সেটি স্বস্তির নয়। তবুও কিছুটা কম দামে বিক্রি হওয়ায় নিম্নবিত্তরা ঝুঁকছেন ভ্যানের পেঁয়াজের দিকেই।

গলির ভ্যান থেকে প্রতি সকালে সবজি কেনেন গৃহকর্মী সাবেরি বেগম। পেঁয়াজ এবং মশলা কিনতে বাজারে যান। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৯০ টাকা। বাজারে পেঁয়াজের বাড়তির দিকে থাকায় ভ্যানেই ভরসা পেলেন। ভ্যানে কেজিপ্রতি বিক্রি করা ৮০ টাকার পেঁয়াজ দরদাম করে আরও একটু কমিয়ে ৭৫ টাকায় কিনতে পেরে বিজয়ের হাসি দিলেন।

গৃহকর্মী সাবেরি বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কষ্ট কইরা পেঁয়াজ কিনতে বাজারে গেছিলাম। কিন্তু দাম তো আবারও বাড়ায়া দিছে। এর চেয়ে ভ্যানই ভালো। দামদর করা যায়। দাম আরও বাড়ায়া দেয় কিনা সেই চিন্তায় আছি।’

ভোজন বাঙালি মুসলিমদের রমজান মাসটি ইবাদতের পাশাপাশি প্রতিটি দিন উৎসব করে চলে ইফতার আদায়। ইফতারের মধ্যে পেঁয়াজুর চাহিদা থাকে শীর্ষে। ফলে বাড়তি দামের পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও শঙ্কা ক্রেতাদের মনে।

কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন দর্জি খিলজী হাকিম। তিনকেজি পেঁয়াজ কেনার পরিকল্পনা নিয়ে এলেও বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি থাকায় এক কেজি পেঁয়াজ নিয়েই বাজার ছাড়লেন তিনি।

খিলজী হামিদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য রোজার সময় বাইরের পেঁয়াজু, ছোলা কিনি না। কিন্তু এবার তো মনে হয় পেঁয়াজুর আইটেম বাদ দিতে হবে। কারণ তরকারির জন্যই ঠিকঠাক পেঁয়াজ কিনতে পারলাম। তিনকেজি পেঁয়াজের জায়গায় এককেজি কিনে বের হচ্ছি। বাকি দিন কেমনে যায় জানি না।’

পেঁয়াজ রপ্তানি মাস খানেক আগেই বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত । এরপরই অস্থির হয়ে পড়ে পেঁয়াজের বাজার। চলতি বছরের শুরুতে দাম কিছুটা কমে কেজি প্রতি ৭০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আবারও কেজি প্রতি ২০ টাকা দাম বেড়ে যায় পেঁয়াজের। এদিকে নতুন হালি পেঁয়াজ ফাল্গুন নাগাদ বাজারে আসবে।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আড়তদার ইউনুস মাতাব্বুর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ অনেকর চাষি মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ করতে চান না। মাত্র ২০ কাটা জমিতে চাষ হয় মুড়ি কাটা পেঁয়াজ। কিন্তু হালি পেঁয়াজের চাষ হয় কয়েক বিঘা। আমি নিজে দুই বিঘা হালির পেঁয়াজ চাষ করেছি। কিন্তু হালির পেঁয়াজ বাজারে আসবে ফাল্গুনে। এদিকে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের উৎপাদন শেষ হয়ে গেছে। তাই দাম বাড়তি। আগে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ছিলো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা।’

এদিকে নানা সিন্ডিকেটে দাম বেড়ে ক্রেতার পকেট খালি হলেও প্রাপ্য টাকা পায় না চাষিরা। বঞ্চিত চাষিরা লাভ না হওয়ায় মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে বেশ অনাগ্রহী।

ফরিদপুরের সালথার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মো. সোহেল মাহমুদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চারা কম পাওয়া যায়। এই কারণে দামও থাকে অনেক বেশি। পেঁয়াজের মণ থাকে তিন থেকে চার হাজার টাকা। খরচপাতি হইয়া লাভ নাই। এসময় কৃষাণের হাতে টাকাও থাকে না। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ যখন বিক্রি করছিলাম কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এখন বাজারে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তির দিকে। এখন বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। কিন্তু আমরা কৃষকরা টাকা তো পাইনা। এই টাকাগুলা চইল্যা যায় যারা আমাদের কাছ থিকা যারা কিনে নিয়া যায় ওই ব্যাপারিরা। পরে আড়তওয়ালা কিনে নেয় ব্যাপারিদের কাছ থিকা। শুনছি ঢাকা শহরের যেখান দিয়া পেঁয়াজের ট্রাকগুলা ঢোকে সেখান থিকা টাকা দিতে দিতে তাগো যাইতে হয়। রাস্তার এই চাঁদাবাজি বন্ধ করলে আর আমাদের কৃষানের দিকে একটু নজড় দিলে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাইড়া যাইবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এখন তিন হাসপাতালে রোগী দেখছেন সেই ডা. সংযুক্তা সাহা

কোরবানির ঈদ সামনে, মশলার বাজারে উত্তাপ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :