আঁশযুক্ত খাবারে কমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৮ | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৪৭

ডায়াবেটিস বা মধুমেহ এমন একটি মারাত্মক রোগ যার কোনো চিকিৎসা নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করলেই সুস্থ জীবনযাপন করা যায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে থাকে উঁচুমানের সুগার। শরীর যখন যথেষ্ট ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণ করতে পারে না এবং তাই রক্তের সুগারও নামাতে পারে না অথবা ইনসুলিন কিছু নিঃসরণ হলেও শরীর যদি তা ব্যবহার করতে না পারে তখন হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিস। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবার জন্য নানা উপাদানই আছে। যেমন- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, শরীরকে সক্রিয় রাখা, ধূমপান না করা। খাদ্যশস্যের আঁশ খেলে কমে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।

ফাইবার বা আঁশসমৃদ্ধ খাদ্যশস্য গ্রহণ কম হলে এবং হাইগ্লাইসিমিক ইনডেক্স খাদ্য খেলে বাড়ে ঝুঁকি। হাইগ্লাইসিমিক শর্করা খেলে রক্তের সুগার উঠে তুঙ্গে। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস থেকে সুরক্ষা পেতে বেশিরভাগ খাবারে গোটা খাদ্যশস্য, আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত ওজন, কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও পাইলসের মতো সমস্যা প্রতিরোধেও ফাইবারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

আঁশ বা ফাইবার হলো ফল, সবজি ও শস্যের এমন অংশ যা আমাদের পাকস্থলী হজম করতে পারে না। খাবারের এই অংশগুলো ক্যালরি, ভিটামিন অথবা মিনারেল বহন না করলেও, খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়ায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ফাইবার দুই প্রকারের হয়ে থাকে—দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয়। উভয় প্রকারের ফাইবারকেই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

দ্রবণীয় ফাইবার খাবার খাওয়ার পর তা পানিতে মিশে ‘জেল’ জাতীয় পদার্থে পরিণত হয়। এ পদার্থ খাবার হজম করার গতি কমিয়ে দেয়, ফলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। দ্রবণীয় ফাইবারের কিছু ভালো উৎস হলো— ডাল, ফলমূল, শাকসবজি, ওটস, বার্লি, মটরশুঁটি, শিম ও বিন জাতীয় খাবার।

অদ্রবণীয় ফাইবার খাবার খাওয়ার পর পানিতে মিশে যায় না। পরিপাক নালীর ভেতরে হজম প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ে এগুলো গোটা অবস্থাতেই থাকে। অদ্রবণীয় ফাইবার পানি শোষণ করার মাধ্যমে পায়খানা নরম করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে শরীর থেকে সহজেই মল বেরিয়ে যেতে পারে। এভাবে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে ও পায়খানা নিয়মিত হতে সাহায্য করে।

অদ্রবণীয় ফাইবারের কিছু ভালো উৎস হলো— পূর্ণশস্য বা হোল গ্রেইন খাবার, লাল আটা, বাদাম, খোসা ও বিচিসহ ফল-সবজি।

সুস্থ থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ফাইবার আমাদের দেহে যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যেমন: পাইলস, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম ও ডাইভারটিকুলাইটিস। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডাইভারটিকুলার ডিজিজের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।

ফাইবার রক্তপ্রবাহ থেকে রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে সরিয়ে পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয় এবং রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। এভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকলে রক্তনালীর ভেতরে কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তনালীর নানান রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে আসে।

ফাইবার কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। হজমের প্রক্রিয়ায় শ্বেতসার জাতীয় খাবার ভেঙে সুগার তৈরি হয়। আঁশযুক্ত খাবার এই প্রক্রিয়ার গতি কমিয়ে দেয় এবং রক্তে সুগারের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। এভাবে আঁশযুক্ত খাবার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

মানসিক স্বাস্থ্যের সাথেও ফাইবার গ্রহণ করার সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য সমস্যায় ভুগলে সেটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এসব অসুস্থতা দূরে রাখার জন্য আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে তৈরি হওয়া অশান্তি, উদ্বিগ্নতা ও অনিদ্রা এড়ানো সম্ভব হবে।

দৈনিক কতটুকু ফাইবার গ্রহণ করা প্রয়োজন- ২–৫ বছর : ১৫ গ্রাম, ৫–১১ বছর: ২০ গ্রাম, ১১–১৬ বছর: ২৫ গ্রাম, ১৭ বছর ও তদূর্ধ্ব: ৩০ গ্রাম।

ফাইবার হল উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত খাবারের একটি উপাদান যা মানুষের হজমকারী এনজাইম দ্বারা সহজে ভেঙে ফেলা যায় না। যখন ফাইবার ভেঙে যায় এবং শরীর দ্বারা শোষিত হয়, তখন এটি শরীরকে অবাঞ্ছিত খাবার শোষণ করতে বাধা দেয়। জেনে নিন সহজলভ্য কিছু ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা-

ওজন কমাতে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার বিস্ময়কর কাজ করে। ক্যালরির কথা চিন্তা না করেই এসব খাবার খাওয়া যায় । ফাইবার এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট যা সহজে হজম হয় না। তবে খাবারে থাকা প্রাকৃতিক ফাইবার হজমে সহায়তা করে।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়াতে ভূমিকা রাখে। শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে ও হজমে সহায়তা করে যেসব ফাইবারযুক্ত খাবার-

লাউ

লাউ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ এবং কে এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস। এটি মিষ্টি এবং সুস্বাদু উভয় আইটেম তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এই সবজিটি একটি চমৎকার বিকল্প।

ঢ্যাঁড়শ

সবুজ এই সবজিটি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। এটি ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন, এনজাইম এবং অন্যান্য অনেক খনিজের একটি ভালো উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়। উচ্চ ফাইবার সামগ্রীর কারণে, ওকরা অন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে।

ব্রকলি

সবুজ সবজিটি ফাইবার এবং ভিটামিন সি উভয়ই সমৃদ্ধ। গবেষণা অনুসারে, ব্রকলিতে প্রতি কাপে পাঁচ গ্রাম ফাইবার থাকে। এই সুস্বাদু সবজিটি উপভোগ করতে সামান্য তেল এবং রসুন দিয়ে টস করে খেতে পারেন।

পালং শাক

পালং শাক খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো হয়। এই শাক অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে অদ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

মটরশুঁটি

সবুজ ডাল যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টির ভান্ডার। এটি ফাইবার, আয়রন এবং ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ। সবচেয়ে ভালো অংশ হলো এটি তৈরি করা সহজ।

পেয়ারা

পেয়ারা ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস। এক কাপ পেয়ারায় প্রায় ৯ গ্রাম ফাইবার থাকে এবং ভিটামিন সি, এ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যাসিয়াম, পটাসিয়াম এবং অনেক ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসি রয়েছে। বিকাল বা সকালের নাশতায় পেয়ার রাখতে পারেন। চাইলে জুসও তৈরি করতে পারেন।

নারিকেল

নারিকেলে অভ্যন্তরে থাকা তরল এন্ডোস্পার্ম ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। এতে প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট থাকে-যা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। নারিকেল ওজন কমায়,পাশাপাশি ত্বকের জন্য উপকারী।

নাশপাতি

নাশপাতি ফাইবার সমৃদ্ধ এবং কোলেস্টরলমুক্ত সুস্বাদু একটি ফল। বিভিন্ন সালাদ, ডেজার্ট তৈরি করে এই ফলটি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে পারেন।

অ্যাভোকাডো

সবুজ অ্যাভোকাডোয় পর্যাপ্ত পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর চর্বি মেদ কমাতে সাহায্য করে। এ কারণে ওজন কমাতে চাইলে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অওঅভোকাডো রাখতে পারেন। খাদ্যতালিত। সকালে ডিমের পাশাপাশি অ্যাভোকাডো খেতে পারেন। এছাড়া দুপুরে বা রাতের খাবারে সালাদ হিসেবে রাখতে পারেন।

খাদ্যশস্য ও সিরিয়াল

লাল চাল বা ঢেঁকি-ছাঁটা চাল সাধারণ চালের তুলনায় অধিক আঁশ সমৃদ্ধ। পূর্ণশস্য গমের আটায় বেশি ফাইবার থাকে। সাধারণ ময়দার বদলে লাল আটার তৈরি রুটি, পাউরুটি ও চাপাতি বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া পাস্তা কেনার ক্ষেত্রে হোল গ্রেইন পাস্তা দেখে কিনতে পারেন। ওটস ও বার্লি বা যব ফাইবার সমৃদ্ধ সিরিয়াল জাতীয় খাবার।

ডাল, ছোলা, মটর ও বিন

মসুর, মুগ, খেসারি ও অন্যান্য ডালে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে। শিমের বিচি, ছোলা, মটর, কিডনি বিন সহ অন্যান্য বিন জাতীয় খাবারও আঁশের ভাল উৎস।

বাদাম

বাদামে ফাইবার থাকে। কিন্তু এতে ফ্যাট ও লবণের পরিমাণও বেশি থাকতে পারে। তাই অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া পরিহার করতে হবে। দিনে এক মুঠো বা ৩০ গ্রাম বাদাম খাওয়া যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে, আমাদের লক্ষ্য যদি হয় স্বাস্থ্যসম্মত ওজন রক্ষা করা অথবা ওজন কমানো, তাহলে ফাইবার খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি, অধিক ক্যালরিযুক্ত ও চর্বি-জাতীয় খাবার খাওয়া কমাতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য ব্যায়াম করা উচিত। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। মাঝারি ধরনের শরীরচর্চার মধ্যে রয়েছে—দ্রুত হাঁটা, ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করা ও সাঁতার কাটা। বিকল্প হিসেবে সপ্তাহে ৭৫ মিনিট করে সাইকেল চালানো, ফুটবল খেলা অথবা বাস্কেটবল খেলার মতো ভারী ব্যায়াম করার চেষ্টা করতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/২৬ আগস্ট/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :