ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৪৬

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ খুলছে আগামী ২ সেপ্টেম্বর। গাড়ি চলবে অন্তত ৮০ কিলোমিটার গতিতে। বদলে যাবে ঢাকার দৃশ্যপট। রাজধানীর যানজট কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দিনে অন্তত ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে নির্বিঘ্নে। থাকবে না কোনো সিগন্যাল। প্রকল্প চালু হলে একদিকে যেমন যানজট কমবে, অন্যদিকে মূল্যবান কর্মঘণ্টাও সাশ্রয় হবে। পরিবহন খরচও কমে আসবে। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। যার একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে।

বর্তমান সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের আরেকটি মাইলফলক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক)। এটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে মাত্র ২০ মিনিটে উত্তরা থেকে কুতুবখালী দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওঠা যাবে। প্রকল্পটি চালু হলে বদলে যাবে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থা। রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিশ্চিতভাবেই আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

কোনো দেশের রাজধানীর পৃথক বৈশিষ্ট্য থাকে। শহরটিকে হতে হয় আধুনিকতা ও নান্দনিকতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। নাগরিক সুবিধা থাকে সুবিস্তৃত ও বহুমুখী। সেই সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও হতে হয় সুগম ও বহুমাত্রিক। আবার শহর থেকে শহরের উপকণ্ঠ ও শহরতলিতে নিত্য যাতায়াতেরও সুবিধা থাকতে হবে। এ সবের জন্য চাই সুষ্ঠু ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা। স্বাধীনতার অর্ধশতকে এমন যোগ্য পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রকৃত অর্থে মিলেছে বিগত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে। ফলে রাজধানী ঢাকার রূপবদল ঘটেছে। যেমন হয়েছে একের পর এক উড়াল সড়ক, হয়েছে যুগান্তকারী মেট্রোরেল। সামনেই উদ্বোধন হতে চলেছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর মেট্রোরেল আরও একটি বিস্ময়-জাগানো মাইলফলক অর্জন। রাষ্ট্রচিন্তায় যদি থাকে দেশ ও মানুষের কল্যাণ, তার প্রতিফলন দেখা যায় সরকারের নীতি ও পরিকল্পনায়। এসব নীতি-পরিকল্পনার আলোকেই গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো। রাজধানীবাসীর কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল পুরোদস্তুর চালু হলে ঢাকা মহানগর ও তৎসংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ অগ্রগতি হবে।

রাজধানীতে যত সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে যানজট সবচেয়ে ভোগান্তিকর। রাজধানীর অসহনীয় যানজটে কেবল জনদুর্ভোগই বাড়ছে না, দেশও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত যানজট হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মঘণ্টারও ক্ষতি করে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে যেমন ব্যাঘাত ঘটে, তেমনি প্রভাব পড়ে অন্যান্য ক্ষেত্রে। হাতিরঝিল বৃত্তাকার সড়ক হওয়ায় যানজট পরিস্থিতি অবশ্য অনেকটা সহনীয় হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ঢাকায় একেকটা উড়াল সড়ক হয়েছে আর ঢাকাবাসীর চলাচলে সুবিধা হচ্ছে, সময়ও বাঁচছে। মিরপুর, মিরপুর ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মহাখালী, বনানী, উত্তরা ও ঢাকা বিমানবন্দরে যাতায়াতের সুবিধার্থে কালশী উড়াল সড়ক খুলে দেওয়া হয়েছে ক’মাস আগে। ক’বছরের মধ্যে মিরপুর আগের চেয়ে অনেক পাল্টেছে। রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে, হয়েছে উড়াল সড়ক। যাতায়াত এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ। অথচ একসময় মিরপুরের এই বাউনিয়াবাঁধ, কালশী, মানিকদী, মাটিকাটা এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল বিচ্ছিন্ন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শপথ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি সেক্টরেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া ও খুলে গেছে অযুত সম্ভাবনার দ্বার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অবস্থা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি সামাজিক খাতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এ অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা ‘ঈর্ষণীয়’ বলে বর্ণনা করেন। এভাবেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ মাথা উচুঁ করে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।

সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা অনেক আগেই পূরণ করেছে। ইতোমধ্যেই জনগণের প্রত্যাশার চেয়েও বেশিকিছু করতে পেরেছে। গুণগত ও সংখ্যাগত দুই দিক থেকেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে, আমরা বাইরে রপ্তানিও করতে পারি। দেশে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছে। আইটি সেক্টর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এসব ইতিবাচক পরিবর্তনগুলোকে অব্যাহত রাখতে পারলে অচিরেই দেশ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে সব পাঠ্যবই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগে মেয়েরা পড়াশুনায় অনগ্রসর ছিল, এখন উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রণোদনার কারণে মেয়েদের শিক্ষিত করার ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা বেড়েছে এবং মেয়েরাও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়েছে।

দেশপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্ঠার্জিত উপার্জন দেশে পাঠাচ্ছে। বাড়ছে রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ হচ্ছে সুনিশ্চিত। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে।

একসময় বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ছিল। বলা হতো অনুন্নত দেশ, তারপর বলা হতো উন্নয়নকামী দেশ। নিম্ন বা গরিব দেশ থেকে এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের বড় অবদান রয়েছে। আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে পারি তাহলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারলে শিল্প-কারখানা আরও গড়ে উঠবে, বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। এক সময় বাংলাদেশকে যারা তলাবিহীন ঝুড়ি বলতো, আজ তারাই দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। এটাই আওয়ামী লীগের অর্জন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী নেত্রীদের মধ্যে আইকন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে স্বপ্ন দেশের মানুষকে দেখিয়েছিলেন, আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :