পাল্টে যাবে শাহজালাল, বছরে সেবা পাবেন কোটি যাত্রী
শেষ হচ্ছে প্রতীক্ষা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে আজ শনিবার। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পরই বিমান পার্কিং করা যাবে। তবে যাত্রীদের জন্য টার্মিনাল উন্মুক্ত হবে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ। বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী সেবা পাবেন এ টার্মিনালে।
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলেই তৈরি শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। নকশাও করেছেন চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকারক রোহানি বাহরিন। এ নকশা বাস্তবায়ন করছে জাপানি দুই কোম্পানি মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং করপোরেশন।
বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনালের সফট লঞ্চিংয়ের মধ্যে দিয়ে আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ।
উদ্বোধনের দিন রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স।
নতুন টার্মিনালটি যাত্রীদের বিশ্বমানের সেবা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। পুরোপুরি সেবার জন্য অপেক্ষা করতে আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত । টার্মিনাল অপারেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় ক্যালিব্রেশন এবং প্রস্তুতির কারণে এই সময়ের প্রয়োজন হবে।
তবে আংশিক উদ্বোধনের পর তৃতীয় টার্মিনালের নতুন পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করতে পারবে এয়ারলাইন্সগুলো। পুরাতন দুটি টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি উড়োজাহাজ থাকতে পারে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে একসঙ্গে মোট ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, মেগা প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। টার্মিনালের কাঠামো প্রস্তুত রয়েছে এবং বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তৃতীয় টার্মিনালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর আগে বিভিন্ন বিদেশি এয়ারলাইন্স ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করার দিকে নজর রাখছে, যা দেশের এভিয়েশন খাতকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুইস এয়ার, এয়ার কানাডা, এয়ার ফ্রান্সসহ অন্তত ১৫টি নতুন বিদেশি এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বেবিচকের মতে, নতুন টার্মিনালে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, ক্যান্টিনা, ডিউটি ফ্রি শপ ও বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে দুটি এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে, যাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত রানওয়ে ছেড়ে যেতে পারে এবং এটি উড্ডয়ন বা অবতরণের জন্য অন্যান্য উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে পারে। নতুন টার্মিনালে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য একটি বড় লাউঞ্জ বছরে ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেবে। অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য কাস্টমসের জন্য একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল রাখা হয়েছে।
এছাড়া টার্মিনালটিতে ৩৬৫০-বর্গ-মিটার এলাকা থাকবে ভিআইপি যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য।
শাহজালাল বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল বর্তমানে ৩০টি এয়ারলাইন্সের প্রায় ১৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার যাত্রীকে পরিসেবা দেয়।
বেবিচকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তৃতীয় টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে যাত্রীদের নির্বিঘেœ বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া ও ভ্রমণের সুযোগ আরও বাড়বে।
এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডেরুম, মুভি লাউঞ্জ, শিশুদের জন্য প্লে-জোন এবং ফুড কোর্ট যাত্রীদের চাহিদা ও স্বাচ্ছন্দ্য পূরণ করবে।
প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা এবং বাকি ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ পেতে যাচ্ছে জাপান। নির্মাণ কাজ করছে জাপানের মিৎসুবিশি, ফুজিটা ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
(ঢাকাটাইমস/০৭অক্টোবর/আরআর/ইএস)