ব্যবসায়ীকে ১৫ দিন আটকে রেখে আ.লীগ নেতার নির্যাতন, গ্রেপ্তার ২

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২৭

সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে টর্চার সেলে এক ব্যবসায়ীকে ১৫ দিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার অফিসের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ভুক্তভোগীকে। এ সময় ওই ব্যবসায়ীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাঈদ মোহাম্মদ সাদাত চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ গ্রামের মৃত সামশুল আলম চৌধুরী ছেলে। শুক্রবার রাতে তিনি বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

মামলার আসামিরা হলেন ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খান, তার ম্যানেজার মহসিন হোসেন, অফিসের কর্মচারী আকাশ, রাজিব ও মাকসুদের চাচাতভাই টফি।

আসামিদের মধ্যে শুক্রবার বিকালে মাকছুদের ম্যানেজার মহসিন হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর রাতেই মূল অভিযুক্ত পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। শনিবার বিকালে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাঈদ মোহাম্মদ সাদাত বলেন, ‘আমি গত ২ সেপ্টেম্বর ব্যবসার কাজে বোমায় আসি। মাসুদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার কিছু ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায় এ কারণে ঐদিন তার অফিসে যাই। এ সময় তার ম্যানেজার আমাকে বলে মাকছুদ ভাই ইন্ডিয়ায় গেছেন। আপনার মোবাইল দুটো নিয়ে আপনাকে আটকে রাখতে বলেছেন। পরের দিন থেকে বিগত ১০ দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার পর্যন্ত আমি মাসুদ ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি তার অফিসে।’

সাদাত বলেন, এ সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন লোক মারফত আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন। এরপর মঙ্গলবার তিনি এসে কোনো কথা ছাড়াই এস এস এর পাইপ দিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটান। পেটানোর পরে অনেক গালাগালি করেন, এবং রবিবারের মধ্যে টাকা না দিলে মেরে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন।

সাঈদ মোহাম্মদ সাদাত বলেন, মাঝেমধ্যে তারা আমার কাছে মোবাইল ফোন দিত এবং তাদের সামনেই আমি আমার পরিবারের সামনে কথা বলতাম। চট্টগ্রামের চাটগাইয়ের ভাষায় কথা বলায় আমার পরিবারের সঙ্গে কী কথা হচ্ছে সেটি তারা বুঝতে পারেনি। এ কারণে আমি আমার অসুবিধার কথা আমার পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি। আমি সেখানে থাকাকালে এবং তাদের কাছ থেকে শুনেছি তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে এভাবে আটকে রেখে টাকা আদায় করে থাকে। এমনকি ওই অফিসের মধ্যেই অনেককে নির্যাতন করে।

সাদাত বলেন, আমাদের পরিচিত লোকজনের মাধ্যমে আমরা সাতক্ষীরার স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি অবগত করতে পারি। পরে সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আমাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ভোমরা বন্দরে সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের ভোট না হওয়াতে ভোমরা বন্দর আজ ব্যবসায়ী শূন্য হতে বসেছে। মাকসুদ খানের মতন অযোগ্য লোক বন্দরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ারর কারণে এই বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে।

অহিদুল ইসলাম বলেন, মাকসুদ খান কোনো রশিদ ছাড়া প্রতি গাড়ি থেকে ২০০ টাকা চাঁদা তুলে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন। ফলে সঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারছি না আমরা। বড়বড় আমদানি কারকরা বন্দর থেকে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে।

অহিদুল ইসলাম বলেন, এখন শুনছি চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে তার অফিসের টর্চার সেলে আটকে রেখে বেধড়ক মারপিট করে আসছিল। তাকে ১৫ দিন আটকে রেখেছিলেন মাকসুদ খান। আমরা ব্যবসায়ীরা চাই ভোমরা বন্দর আগের মতো ব্যবসাবান্ধব বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক এবং অচিরেই ভোমরা সিএন্ডএফ অ্যাসোশিয়েশনের ভোটের মাধ্যমে যোগ্য ব্যাক্তি নেতৃত্বে আসুক।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক আহ্বায়ক ও সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, মাকসুদ খান ও আমার অফিস একই ভবনে। গতকাল শুক্রবার হঠাৎ জানতে পারলাম তার অফিসে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে ১৫ দিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে। এটি খুব দুঃখজনক ঘটনা। তাদের কারণে ব্যবসাটা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিদুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ীকে ভোমরায় আরেকজন ব্যবসায়ী আটকে রেখেছেন—তার কাছে এমন অভিযোগ আসে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়। পরে রাতে ব্যবসায়ী সাঈদ মোহাম্মদ সাদাত বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার আসামি মাকসুদ খান ও তার ম্যানেজার মহসিনকে আটক করে কোর্টে পাঠানো হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :