গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেতানিয়াহুর তিন শর্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৫২ | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৪৬

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ৩টি পূর্বশর্ত দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এই পূর্বশর্তগুলো হলো, ‘হামাসকে ধ্বংস করা’, ‘গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করা’ এবং ‘ফিলিস্তিনের সমাজ থেকে ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণামূলক মনোভাব দূর করা’। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে সাম্প্রতিক ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে একটি কলামে এই শর্তগুলো লিখেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। কলামে এসব শর্তের বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নেতানিয়াহু।

কলামে নেতানিয়াহু লিখেছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর পশ্চিমতীরে ক্ষমতাসীন ফিলিস্তিনি কতৃপক্ষ (পিএ) গাজা শাসন করতে পারবে বলে মনে করেন না তিনি। কারণ পিএ’র সেই সক্ষমতা নেই।

নেতানিয়াহু প্রথম পূর্বশর্ত, ‘হামাসকে ধ্বংস করা’ সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চলমান অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ অনেক দেশ এ উদ্দেশ্যকে সমর্থন করেছে। তারাও চায়, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শেষ হোক। গাজায় হামাসের শাসন অবসান এবং তাদের সামরিক সক্ষমতা সর্ম্পূর্ণ নষ্ট করার মাধ্যমেই এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘ হামাসকে ধ্বংস করা ব্যতীত আমাদের সামনে আর কোনো উপায়ও নেই। কারণ হামাসের নেতারা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবরের মতো হামলা ভবিষ্যতে বার বার তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সারাক্ষণ এই ঝুঁকির মধ্যে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’

দ্বিতীয় শর্ত: ‘গাজাকে নিরস্ত্রিকরণ করার’ ব্যাখ্যায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা চাই না যে গাজা উপত্যকা হামাসের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হোক। এ কারণে উপত্যকার পরিসীমা বা সীমান্তে একটি সাময়িক নিরাপত্তা জোন স্থাপন করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে গাজা ও মিসরের মধ্যে যে সীমান্তপথ রয়েছে, সেই রাফাহ ক্রসিংয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো জরুরি। কারণ গাজায় অস্ত্রের চালান ঢোকে মূলত এই সীমান্ত দিয়েই।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি প্রত্যাশা করি যে (যুদ্ধ অবসানের পর) পিএ গাজায় এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবে, তাহলে সেটি হবে দিবাস্বপ্ন। কারণ পিএ’র সেই সক্ষমতা কিংবা ইচ্ছে কোনোটাই নেই।’

তৃতীয় পূর্বশর্তের ব্যাখ্যায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘ফিলিস্তিনের স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের অবশ্যই এটা শেখাতে হবে যে মৃত্যুর চেয়ে বেঁচে থাকা অনেক মূল্যবান এবং জীবনের যত্ন নেওয়া জরুরি। ফিলিস্তিনের ইমামরা সবসময় তাদের ধর্মীয় বক্তব্যে ইহুদিদের হত্যার পক্ষে উসকানি দেন- এটা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ যেন সন্ত্রাসবাদে অর্থের যোগান দেওয়ার পরিবর্তে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইকে সমর্থন করে— সেজন্যও ফিলিস্তিনের সুশীল সমাজকে কাজ করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তারপর থেকেই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। দুই মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় প্রায় ২১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারীও শিশু। আহত হয়েছেন ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি।

এছাড়া ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। যা গত ৭৫ বছরে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

মাঝে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ৮৪ ইসরায়েলি এবং ২৪ বিদেশিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯ জন শিশু রয়েছে।

যুদ্ধবিরতি শেষে গত ১ ডিসেম্বর থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় সংঘাতে জড়ায় ইসরায়েল ও হামাস।

অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন। পাশপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। এরমধ্যে বন্দিবিনিময়ে ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তাদের কাছে এখনো প্রায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে হামাসের কাছে বন্দি জিম্মিদের কীভাবে মুক্ত করা হবে, সে সম্পর্কে নেতানিয়াহুর কলামে কোনো নির্দেশনা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এছাড়া ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ বা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নামে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও এড়িয়ে গেছেন নেতানিয়াহু।

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :