কিডনি সংক্রমণে কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৯

মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি বা বৃক্ক। কিডনি রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থগুলো পরিশোধন করে এবং মূত্র তৈরি করে সেগুলো দেহ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। একটি অসুস্থ বা অকার্যকর কিডনির কারণে একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। তবে এরপরও মানুষ এই অঙ্গ নিয়ে এতটাও ভাবতে চান না। সেই কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা এখন বাড়ছে। কিডনি শুধু রক্ত পরিশোধনেই সাহায্য করে না, এর পাশাপাশি শরীরে তরল ও বিভিন্ন প্রকার লবণের ভারসাম্য, রক্ত উৎপাদনে সহায়তা এবং শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি যথাযথভাবে কাজ করছে কিনা কিংবা কিডনির স্বাভাবিক কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য কিডনি সমস্যার বিভিন্ন লক্ষণের ওপর আমাদের নজর রাখা এবং সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি।

কিডনি বিভিন্ন কারণে সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্র্র্রাইটিস, দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, প্রস্রাবের নালিতে বাধার কারণে কিডনি রোগ হতে পারে। জন্মগত ত্রুটি এবং বংশগত কারণেও কিছু কিডনি রোগ হয়ে থাকে।

অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, ক্রমাগত রাত জাগা এবং পর্যাপ্ত পানি পান না করার ফলে ক্ষতি হতে পারে কিডনির। যেহেতু মানব শরীরে কিডনির সংখ্যা দু’টি, তাই একটি বিকল হলেও কাজ চলতে পারে অন্যটি দিয়ে। ফলে কিডনিতে পাথর জমা ছাড়া অন্য আর কোনও ক্ষতির আঁচ পাওয়া যায় না বাইরে থেকে। সময় থাকতে কিডনির সমস্যা ধরা না পড়লে সেরে ওঠার সম্ভাবনাও কমতে থাকে।

অনেক কিডনি রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। অনেক কিডনি রোগ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা এর অগ্রসরতা ধীর করা সম্ভব। কিডনি রোগের উপসর্গসমূহ বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়।

যদি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস এবং কিডনি বিকল হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস থাকে তা হলে প্রতি বছর কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। তা ছাড়াও শরীরের এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে যা কিডনির স্বাস্থ্য কেমন রয়েছে, সে সম্পর্কে ইঙ্গিত দিতে পারে। জানেন, সেই লক্ষণগুলি কী?

প্রস্রাবের বেগ

খুব বেশি পানি না পান করলেও বার বার প্রস্রাবের বেগ আসা কিডনি বিকল হওয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ কখনও কখনও প্রস্টেটের সমস্যারও ইঙ্গিত দেয়।

চোখের ফোলা ভাব

পর্যাপ্ত ঘুমোনোর পরেও যদি চোখের তলায় ফোলা ভাব না কমে, তা হলে বুঝতে হবে কিডনির কার্যকারিতায় কোনও সমস্যা হচ্ছে। রক্ত থেকে পুষ্টিকর পদার্থ ছেঁকে দূষিত পদার্থ বার করতে পারছে না কিডনি। ফলে রক্তের মধ্যে থাকা প্রোটিন মিশে যাচ্ছে মূত্রের মধ্যে। যার ফলস্বরূপ চোখের চারপাশে এই ধরনের ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।

পা ফোলা

পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে অনেক সময় পায়ের পাতা ফুলে যায়। শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু কিডনি বিকল হলেই যে পায়ের পাতা ফুলে যেতে পারে, তা নয়। হার্টের সমস্যা থেকেও পা ফুলতে পারে।

খিদে না পাওয়া

কিডনি ঠিক ভাবে কাজ না করলে খাওয়ার ইচ্ছে চলে যেতে পারে। তবে পা ফোলার মতো এমন সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিডনি স্বাভাবিক ভাবে কাজ না করলে শরীরে ‘টক্সিন’-এর পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে খাওয়ার ইচ্ছে হ্রাস পেতে পারে।

বমি বমি ভাব

কিডনি বিকল হয়ে গেলে শরীর থেকে সমস্ত টক্সিন বা ক্ষতিকর পদার্থ মূত্রের সঙ্গে বেরোয় না। কিডনির সমস্যার ফলে শরীরেই সেই ক্ষতিকর পদার্থগুলো জমতে থাকে। তা থেকে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।

ত্বকে পরিবর্তন

কিডনি সুস্থ না থাকলে তার প্রভাব ফুটে ওঠে ত্বকে। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করার পাশাপাশি রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহিত কণিকা উৎপাদন করা, বিভিন্ন খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখা, হাড়ের স্বাস্থ্য— সবই নির্ভর করে কিডনির উপর। রক্তে বিভিন্ন উপাদান সঠিক মাত্রায় না থাকলে, ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে।

ত্বকের অতিরিক্ত দাগছোপ কিডনির সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। কিডনি ঠিক ভাবে কাজ না করলে, রক্ত পরিষ্কার হয় না। সঠিক ভাবে রক্ত পরিস্রুত না হলে, ত্বকে দাগছোপের পরিমাণ বাড়তে থাকে।

কিডনির সমস্যা থাকলে ত্বকে ফুসকুড়ি, র‌্যাশ, চুলকানির মতো সমস্যা হতে পারে। ত্বকে এমন কিছু উপসর্গ দেখা দিলে ফেলে না রেখে দ্রুত এক জন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

কিডনিতে সংক্রমণ হলে রক্ত ঠিকমতো পরিশ্রুত হয় না, এর ফলে রক্তে টক্সিন জমে ত্বকের রং বদলে যেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে ত্বক হলদেটে দেখায়, কারও ক্ষেত্রে আবার ত্বক কালচে দেখায়। চামড়ার উপর হলদেটে মাংসল পিণ্ডও চোখে পড়ে অনেক সময়ে।

কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে হলে

কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে হলে যে কোনো ব্যক্তিকেই রক্তচাপ রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণে। কেননা অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

শরীরের অতিরিক্ত ওজন কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সুস্থ থাকতে হলে ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণও কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে খাওয়ার প্রতি সচেতন না থাকায় বিভিন্ন কারণে কিডনিতে জমছে টক্সিন। প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু খাবার অবশ্যই কিডনি ভালো রাখতে পারে। সেই খাবার রাখতে হবে পাতে।

তাজা যে কোনও ফল ভালো হতে পারে কিডনির জন্য। আসলে এই খাবারে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিন্তু কিডনির জন্য উপকারী। তবে কিডনির রোগ ইতিমধ্যেই থাকলে তখন সতর্ক হতে হবে। সেক্ষেত্রে লো পটাশিয়াম যুক্ত ফল খেতে হবে। এই তালিকায় আসবে আপেল, পেয়ারা, ন্যাশপাতি, জামরুল ইত্যাদি।

কিডনির রোগ থাকলে আপনাকে কম পটাশিয়াম যুক্ত সবজি যেমন ঝিঙে, পটল, চিচিঙ্গে খেতে হবে। এছাড়া খেতে পারেন মাঝারি পটাশিয়াম যুক্ত সবজি যেমন আলু, ভেন্ডি, পেঁপে, গাজর, শসা, ধনেপাতা ইত্যাদি।

চিকিৎসকের মতে, আসলে কিডনি ভালো রাখতে গেলে প্রোটিন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে খেতে হবে মেদ বিহীন মাংস। খেতে পারেন চিকেন। তবে এড়িয়ে যান কিছু বিশেষ খাবার যেমন রেডমিট, খাসির মাংস ইত্যাদি। এভাবেই ভালো থাকতে পারবেন। নইলে সমস্যা বাড়বে।

​কিডনি ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই পানি পান করতে হবে পরিমিত। এক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে কিন্তু কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দিনে অন্তত পক্ষে ৩ লিটার পানি পান করুন। তবে কিডনির রোগ থাকলে পানি পান করতে হবে মেপে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।

​ডাবের পানি কিডনি সুস্থ রাখে। ডাবের পানিতে রয়েছে ভালো পরিমাণে ইলেকট্রোলাইটস। এই ইলেকট্রোলাইটস কিন্তু কিডনির জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। দেখা গিয়েছে যে আপনি যদি কিডনি সুস্থ রাখতে চান, তবে ডাবের পানি পান করতে হবে।

ধূমপান, অ্যালকোহল কিডনির অনেক ক্ষতি করে। অনেকের কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ারও ঘটনা ঘটে। কিডনিকে সুস্থ রাখতে চাইলে ধূমপান, অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। ধূমপান আমাদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের রক্ত প্রবাহকে ধীর করে দেয়। আর রক্ত যখন কিডনিতে পৌঁছায়, তখন তাদের স্বাভাবিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। কিডনির রোগ সহজে বোঝা যায় না। নীরব ঘাতকের মতো এটি কাজ করে। উপসর্গ বোঝার আগে কিডনির ৯০ শতাংশ খারাপ হয়ে যায়। তাই আগে থেকেই কিডনির ব্যাপারে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

(ঢাকাটাইমস/৫ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :