নেট খুঁজে দিলো ৪০ বছরের হারানো জীবন

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:৩৮ | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:৩০

মিলনের ক্ষণ অন্যরকম এক মুহূর্ত তৈরি করে। সে মূহূর্ত হাজারো আলোকসজ্জিত আয়োজন করে পাওয়া সম্ভব নয়। আর যদি হয় সেটা হারিয়ে যাওয়া কোনো আপনজনের ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে! তাহলে সেটা কোনো ভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এমনকি একটি আবেগঘন মিলন ঘটেছে মা-মেয়ের।

ঘটনার শুরু

বারো বছরের এক কিশোরীকে গুয়াহাটির রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখে সতেরো বছরের কিশোর রামদুলারি প্রসাদের মায়া হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা কিশোরটি গুয়াহাটিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। মেয়েটিকে সে মালকিনের কাছে নিয়ে আসে। তিনি তাকে বাড়ির কাজে লাগান। রামদুলারি যখন ২৩, সে গোরক্ষপুরে, নিজের গ্রামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ততদিনে প্রাপ্তবয়স্ক ওই কিশোরীও। পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে প্রেম।

রামদুলারি মালিকের কাছে গিয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু মেয়েটি যে মুসলিম। নাম সরিতন্নেসা। রাম জানায়, কুছ পরোয়া নেই। বউয়ের নাম দেয় ‘আশাদেবী’। গুয়াহাটিতে বিয়ে সেরে রাম ও আশা পাড়ি দেয় গোরক্ষপুরে। পিছনে পড়ে থাকে সরিতন্নেসার অতীত। সেই স্মৃতি, গুগল আর ছেলের নাছোড়বান্দা মনোভাবের জেরেই চার দশক পরে দেখা হল মা-মেয়ের।

মেয়েকে দেখে আত্মহারা, অশীতিপর হাজেরা খাতুন জানান, অভাবের সংসার। তাই একমাত্র মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই গুয়াহাটিতে বিভিন্ন বাড়িতে তিনি কাজ করতেন। মেয়েকে রেখে যেতেন অস্থায়ী আস্তানায়। এক দিন মাকে খুঁজতে বেরিয়ে হারিয়ে যায় সরিতন্নেসা। বহু খোঁজাখুঁজির পরেও মেয়েকে না পেয়ে গ্রামে ফিরে আসেন হাজেরা।

এ দিকে, রামদুলারি ও আশাদেবীর তিন সন্তান। এখনও মিস্ত্রির কাজ করা রামদুলারিবাবু ছেলেদের লেখাপড়ায় কার্পণ্য করেননি। বড় ছেলে এমবিবিএস পাশ করে ইন্টার্ন। মেজো বিজ্ঞানের শিক্ষক। ছোট ছেলেও ডাক্তারি পড়ছে।

খোঁজের সূত্রপাত

আশাদেবী বলেন, “ছোট ছেলেকে মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকতে দেখে একদিন বলি, খুঁজে দে দেখি আমার গ্রামটা।” নগরবেরা আর জলজলি নদীর নামটুকুই মনে ছিল আশার।

ছেলে খোঁজ শুরু করে। মিলে যায় নগরবেরার সার্কল অফিসার ধ্রুবজ্যোতি দাসের মোবাইল নম্বর। সেখানে ফোন করেই মায়ের গল্প শোনায় ছেলে। ধ্রুবজ্যোতিবাবু খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কল্যাণপুর-বালিজারা গ্রামে হাজেরা খাতুনের মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। তিনি এখনও বেঁচে। সেই গ্রামের পাশেই বইছে জলজলি।

অবশেষে মহামিলন

গত সপ্তাহে স্বামী ও ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ৪০ বছর পরে সরিতন্নেসা হাজির হন তাঁর শৈশবের গ্রামে। ১২ বছরের সেই হারানো মেয়ে এখন ৫২। তিন সন্তানের মা। হাজেরা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেন না!

কিন্তু হিন্দু মা যে আসলে মুসলিম, তা জেনে সমস্যা হয়নি ছেলেদের? আশাদেবী জানান, ছেলেরা বড় হওয়ার পরেই সে কথা তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়। মায়ের জন্মগত ধর্ম নিয়ে তাদের কারও মাথাব্যথা ছিল না। রামদুলারি বিশ্বাস করেন, ‘‘এক দিন অসহায় এক কিশোরীকে আশ্রয় দিয়ে যে পুণ্য করেছেন, তারই ফল তিন রত্ন-ছেলে।’’

ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/এসএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :