রেল বন্ধ তবুও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজে ওয়েম্যানরা

এম হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম
 | প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০৭:৫৪

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ছুটিতে আর সবকিছুর মতো রেল যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার নির্দেশনার পর রেলওয়ের লাইন মেরামতের কর্মীদের কাজ থেমে নেই। গত এক সপ্তাহ ধরেই চট্টগ্রামের ষোলশহর স্টেশনে রেললাইনে কাজ করছেন ওয়েম্যানরা।

সরেজমিনে এই প্রতিবেদক করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও কেন তারা কাজ করছেন প্রশ্ন করলে এদের কেউই উত্তর দিতে পারেননি। তবে কেউ কেউ বলেন ওপরের কর্মকর্তাদের নির্দেশের তারা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা তো অসহায়। এই চাকুরী করেই আমাদের পরিবার চালাতে হয়। আমরা জানি না লকডাউন কি আর নিরাপদ দূরত্ব কি। ফলে আমাদের কাজ করে যেতে হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ষোলশহর রেলস্টেশনের দায়িত্বে আছেন উর্ধতন উপ সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আউলাদ হোসেন। তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে এই শ্রমিকদের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কিনা খোঁজ নেন।

এই শ্রমিকেরা সরকার ঘোষিত লকডাউনের বাইরে কিনা প্রশ্নে প্রকৌশলী আউলাদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কন্ট্রোলিং অফিসার প্রধান প্রকৌশলী- ১ হামিদুল হকের নির্দেশে আমরা কাজ করাই। এরা লকডাউনের আওতায় না আওতার বাইরে তা আমি জানি না।

‘আমি ছোট পদে আছি। আমাদের উর্ধতন অফিসারগণ যেভাবে নির্দেশ দেবেন আমরা সেভাবে কাজ করি। এব্যাপারে প্রকৌশলী হামিদুল হকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

ষোলশহর রেললাইনে ৬/৭ গ্যাং বর্তমানে কাজ লাইন মেরামতের কাজ করছেন। একেকটি গ্যাংয়ে ৯/১০ জন শ্রমিক থাকে। তারা প্রতিদিনই নিয়ম করে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে তাদের কাউকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

এভাবে ঝুঁকিতে শ্রমিকদের কাজে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী-১ হামিদুল হকও তার ওপরের কর্মকর্তাদের নির্দেশের দোহাই দিলেন।

ঢাকাটাইমসকে রেলওয়ের এই প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের ওপরের নির্দেশ রয়েছে কাজ চলমান রাখার। তাই কাজ করতেছে শ্রমিকরা।’

করোনা মহামারীর মধ্যে এভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে যে সমস্ত এলাকায় রেলের ওয়েম্যানরা কাজ করছেন তাদের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো ধরনের ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি তার জানা নেই বলে দাবি করেন রেলওয়ের এই প্রকৌশলী।

এসব বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের প্রধান সুবগক্তগিনের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারের সঙ্গে মুঠোফোনে চেষ্টা করে তাকেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে করোনার মধ্যেও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি দুঃথজনক বলে মনে করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ।

ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘দূর্যোগকালেও রেলওেয়ের কর্মচারীগণ ঝুকিভাতা পায় না, যাহা খুবই দুঃখজনক। অথচ সরকারের অধীনে কর্মরত বিজিবি, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগ বা সংস্থা কর্মচারীরা ঝুঁকি ভাতা পান।

‘রেলওেয়ের প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত ওয়েম্যান, কি ম্যান, মেইট, হেড মেইট, গেইটম্যান, এস এ ই, এস এস ই-সহ বিভিন্ন পদের কর্মীরা কোনো প্রকার ঝুঁকিভাতা পায় না। অথচ তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড় তুফান ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, হরতাল অবরোধসহ সকল দূর্যোগের সময় রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করেন।

বিপুল পরিমান রেল শ্রমিকের জন্য এব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানান রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ।

ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/প্রতিনিধি/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

বন্দর নগরী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :