সাক্ষাৎকারে কাউন্সিলর হাসান নূর ইসলাম রাষ্ট্রন

মানুষ মশারি ছাড়া ঘুমায় শুনে নিজেকে গর্বিত লাগে

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২০, ২০:৪৬ | প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর ২০২০, ২০:২৪

পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, মশার উপদ্রব কমানোসহ নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের। খেলার মাঠের সংস্কার, পানি সরবরাহ বৃদ্ধির কাজগুলো শেষ হলে এটি মডেল ওয়ার্ড হতে পারে। এমনই দাবি কাউন্সিলর হাসান নূর ইসলাম রাষ্ট্রনের। তিনি বলেছেন, এখন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মশারি ছাড়া ঘুমায়। এ কথা শুনে তার নিজেকে গর্বিত মনে হয়।

তবে মাদকের আখড়া বলে পরিচিত জেনেভা ক্যাম্পে বেড়েছে মাদকের কারবার। ২০১৬ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের বেশ কটি মাদক সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বর্তমানে ক্যাম্পটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কিছুটা কম। এটি সুযোগ হিসেবে নিয়েছে মাদক কারবারিরা। তারা কৌশলও বদলেছে। শিশুদের ব্যবহার করছে মাদক বহনে।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে এক একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন এই জনপ্রতিনিধি। তিনি জেনেভা ক্যাম্প থেকে মাদককে চিরতরে নির্মূল করার প্রত্যয়ও জানান।

এই ওয়ার্ডের প্রায় পৌনে দুই লাখ জনসংখ্যার এর বড় একটা অংশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে আটকে পড়া উর্দুভাষী। দেশের ১১৬টি উর্দুভাষী ক্যাম্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত এই ওয়ার্ডের জেনেভা ক্যাম্প। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঘনবসতি ক্যাম্পটি মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত।

কাউন্সিলর হাসান নূর ইসলাম রাষ্ট্রন বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে আমি মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। মাদক হটাতে তখনকার কাউন্সিলরের দিকে তাকিয়ে না থেকে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। মাননীয় মন্ত্রী তৎকালীন ডিসিকে দায়িত্ব দেন। তারা তাদের টিম দিয়ে অনুসন্ধান করে দেখেন এখানে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। এরপর বড় আকারে অভিযান পরিচালিত হয়।

সেবার ডিসিকে সভাপতি করে ক্যাম্পে পাঁচটা বৈঠক করেন তারা। রাষ্ট্রন বলেন, “তখন আমরা তাদের (মাদক ব্যবসায়ীদের) সাধারণ ক্ষমার মতো করে বলি, ‘তোমরা অতীতে কী করেছ না করেছ আমরা দেখতে যাব না। কিন্তু আজকের পর থেকে তোমরা যদি এ ধরনের কাজ করো, তাহলে আমরা কিন্তু ছাড়ব না।’ এরপর মাদকের ব্যবসা অনেক কমে গেছে।”

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মাদকের ব্যবসা ফের বেড়েছে জানিয়ে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘করোনার কারণে পুলিশ ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকতে পারছে না। তাতে মাদক কারবারের সুযোগ হয়তো একটু বেড়েছে। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা একেবারে ছোট ছোট বাচ্চাদের দিয়ে মাদক বহন করাচ্ছে। এদের ধরে তো আমরা কিছু করতে পারছি না। মূল হোতারা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এর আগে অনেক বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আমরা চাচ্ছি মাদককে চিরতরে নির্মূল করতে। অতীতে কে কী করেছে, কোন কাউন্সিলর কী করেছে, এটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।’

জেনেভা ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে দীর্র্ঘদিন ধরে সংকট চলছে। এ সমস্যার কথা তুলে ধরে কাউন্সিলর বলেন, ‘জেনেভা ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল জেনেভা কনভেনশনের আওতায় ছিল। যখন তাদের (ক্যাম্পের বাসিন্দাদের) এ দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হলো, তখন জেনেভা কনভেনশন বলল, তারা যেহেতু এখন বাংলাদেশের নাগরিক, সেহেতু সংস্থাটি তাদের কোনো ধরনের রিফিউজি সুবিধা দেবে না। এরই মধ্যে কয়েক কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়ে গেল। ডিপিডিপি একটা বিপদে পড়ল।’

এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহল ও ডিপিডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্ট্রন। তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিই, ক্যাম্পের ভেতরে যেসব হতদরিদ্র মানুষ আছে, তাদের বিদ্যুৎ বিলের আওতায় আনা যাবে না। তবে যারা আশপাশ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, তাদের বিদ্যুৎ বিলের আওতায় আনা হোক। আমরা অনেক ব্যবসায়ীকে আনতে পেরেছি। আমরা চাই, আস্তে আস্তে অন্যদেরও বিদ্যুৎ বিলের আওতায় নিয়ে আসতে।’

ওয়ার্ডটিতে নাগরিক সমস্যা সমাধানে এবং নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে কাউন্সিলর বলেন, ‘ওয়ার্ডে মশার সমস্যা ছিল, ড্রেনেজের সমস্যা ছিল, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জবাবদিহি সেভাবে ছিল না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভোরবেলায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে থেকে কাজটা কীভাবে আরও দ্রুত ও সুন্দরভাবে করা যায় সে চেষ্টা করছি। পথচারীদের যেন সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে ভোর ছয়টার মধ্যে পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করি। আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে আমি সফল হয়েছি।’

ওয়ার্ডটিতে মশার কোনো সমস্যা নেই এবং নাগরিকরা মশারি ছাড়া ঘুমাতে পারেন বলে দাবি কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্ট্রনের। তিনি বলেন, ‘মশার যে হটস্পট তা আমরাই নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমাদের মাননীয় মেয়র মহোদয় একটি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এখন আমার এলাকার জনগণ বলে, তারা মশারি ছাড়া ঘুমায়। এ কথা যখন শুনি তখন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হয়।’

ওয়ার্ডটিতে পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং খেলার মাঠ রয়েছে। কাউন্সিলরের তথ্যমতে, ওয়ার্ডের পাঁচটি খেলার মাঠ সব বয়সী নাগরিক ও নারীদের উপযোগী করা হচ্ছে। আরবান প্রকল্পের আওতায় চলছে সুপেয় পানি ব্যবস্থার কার্যক্রম। সব কাজ শেষ হলে এখানকার পরিবেশ আরও অনেক সুন্দর হবে, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড হতে পারে একটি মডেল ওয়ার্ড।

সিটি করপোরেশনের ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী জানুয়ারির মধ্যে এই ওয়ার্ডের সড়কে এলইডি বাতি স্থাপন করা হবে। আর সামান্য যেটুকু অনুন্নত রয়েছে, তা উন্নত করা, সুয়ারেজ লাইনের সমস্যা সমাধান করার কথা জানান সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্ট্রন।

গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাষ্ট্রন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন, সেটি পূরণ করার জন্য সর্বোচ্চটা দিয়ে সৎ ও সুন্দর থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

তার ওয়ার্ডবাসীর উদ্দেশে কাউন্সিলর রাষ্ট্রন বলেন, ‘করোনা মহামারিতে ঘরে ঘরে গিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এনজিওর সঙ্গে সমন্বয় করেও কাজ হচ্ছে। আপনাদের জন্য কাজ করতে চাই। সবাইকে অনুরোধ করব, যার যা সমস্যা আমাকে জানান। আমার মোবাইল ফোন নম্বর সবার জন্য উন্মুক্ত। সমস্যা সমাধানের জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :