নেয়ামত ভূঁইয়া’র পরিবেশ সংরক্ষণ কবিতা
বৃক্ষবন্দনা: বাঁচে যদি পরিবেশে, বাঁচে সভ্যতা
গাছ-পালা কেটে যদি করো ছারখার,
কোথা পাবে সুবাতাস প্রাণ বাঁচাবার?
দমে দমে নিতে হলে দূষিত বায়ু,
নিশ্চিত রোগে ভোগে কমবে আয়ু।
কারখানা থেকে যদি বর্জ্য এসে,
উর্বর মাটি মাঝে নিত্য মেশে।
সেই মাটি ফলাবেনা খাদ্য-ফসল,
বেড়ে যাবে অনাহারী মানুষের দল।
বৃষ্টির পানি যদি ধুয়ে নেয় মল,
রোগ-জীবানুতে হয় দূষিত সে জল;
রান্না বা খাওয়া-ধোয়া গোসলের কাজে,
সেই পানি ব্যবহার করা যায়না-যে।
বৃক্ষ যে স্রষ্টার কী অরূপ সৃষ্টি!
বুঝতে তা থাকা চাই অন্তর-দৃষ্টি।
যুগে যুগে জ্ঞানি গুণীর এই অভিমত:
তরু লতা আল্লাহর সেরা নেয়ামত।
কুরআনের মাঝে পাই অষ্টাশি বার,
উল্লেখ ফলফুল বৃক্ষলতার।
‘যদি জানো কেয়ামত অতি নজদিগ
তথাপি লাগাবে গাছ’— নবীরই তাগিদ।
গাছ দেয় ফুলফল ছায়া শ্যামলিমা,
মানবজীবনে গাছ জীবন্ত বীমা।
জন্মের ক্ষণ থেকে সারাটা জীবন,
গাছ থাকে মানুষের সখারই মতন।
মরণেও বৃক্ষই সাথি হয় তার,
কবরের মাচা কিবা শ্মশাণে চিতার।
মানুষ ও পশু-পাখি খাদ্য যা-পায়,
সে যোগান দেয় সব বৃক্ষ-লতায়।
গাছ দেয় আশ্রয় ঝড় ঝঞ্ঝায়,
ফল-মূলে পুষ্টিরও অভাব মেটায়।
ঘরবাড়ি আসবাব জ্বালানির কাঠ,
প্রয়োজনে বৃক্ষের যোগান বিরাট।
জীবন রক্ষা করে যে অক্সিজেন,
তরুলতা বৃক্ষেরই মাঝে তা পাবেন।
রোধ করে ভূমিক্ষয় গাছপালা তরু,
গাছ ছাড়া এ-পৃথিবী হয়ে যেতো মরু।
বৃক্ষের গুণে হয় মাটি উর্বর,
নইলে এ-পৃথিবীটা হতো যে ঊষর।
গাছ হতে নির্গত নির্মল বায়ু,
শ্বাসে শ্বাসে নিয়ে বাড়ে মানুষের আয়ু।
গাছ ছাড়া পৃথিবীটা হতো মরুময়,
গাছই রোধ করে যতো দৈব প্রলয়।
যে কুঠার হানো তুমি বৃক্ষের গায়ে,
মূলত কুঠার মারো নিজেরই দু’পায়ে।
বৃক্ষকে বোবা ভেবে যতো তুমি কাটো,
বস্তুত তোমার আয়ু তুমি করো খাটো।
কানে পেতে শোনো বোবা বৃক্ষের কথা-
‘আমি যদি বাঁচি তবে বাঁচে সভ্যতা’।
বাঁচবার বাঁচাবার পথ হবে শেষ,
রক্ষা-না করো যদি আদি পরিবেশ।