কাটাসুর খাল মুক্ত হলেও রামচন্দ্রপুর এখনো দখলরাজ্য!

নিজস্ব প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৪৩

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবরের একসময় সক্রিয় জলধারা ছিল রামচন্দ্রপুর খাল। এই খাল যে বেশ প্রশস্ত ছিল, সেটি এখনো কোথাও কোথাও দৃশ্যমান। তবে সেখানে পানিপ্রবাহ নেই। বদ্ধপানিতে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ আর জলজ উদ্ভিদের বাড়বাড়ন্ত। এমনই আরেক রাজত্ব এই খালে- দখলের। দুই পাশ থেকে গলা চিপে ধরেছে দখলদাররা। মাটি ফেলে রোধ করা হচ্ছে এর প্রবাহ। কোথাও দখল এমন বেপরোয়া যে, মাটি দিয়ে পুরো খাল ভরাট করে নেওয়া হয়েছে। জায়গাটি খাল, সেটি বোঝার কোনো উপায় নেই।

রামচন্দ্রপুর খালে এই দখলরাজ্য গড়ে তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আবার কেউবা দখলের মচ্ছবে মেতেছেন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। বছরের পর বছর ধরে দখলের কারণে খালের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে অনেক জায়গায়।

সম্প্রতি ওই এলাকারই কাটাসুর খাল উদ্ধার করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। একসময় প্রায় হারিয়ে যাওয়া খালটি এখন দৃশ্যমান। ডিএনসিসির এই প্রচেষ্টা আশা জাগিয়েছে রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধারের।

সরেজমিনে দেখা যায়, রামচন্দ্রপুর খালের একাংশে প্রবহমান পানি রয়েছে। মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড, মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি, নবোদয় হাউজিং, শেখেরটেক ও আদাবর অংশে খালে পানিপ্রবাহ দৃশ্যমান। তবে এসব এলাকায় খালের পাড় ঘেঁষে রয়েছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। খালের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট ও বসতবাড়ি।

খালের মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেডের ৫ নম্বর সড়কের পশ্চিম দিকে দেখা গেছে দখলের চরম নৈরাজ্য। খালের প্রশস্ততা এখানে নামমাত্র। পানিপ্রবাহ হচ্ছে মাত্র পাঁচ ফুট জায়গা দিয়ে। অথচ এর প্রকৃত প্রশস্ততা ৩০ ফুটের মতো বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। বাকি জায়গা জুড়ে রয়েছে বহুতল ভবন। পাশেই খালের ওপর গড়ে উঠেছে পাকা মসজিদ। তার পাশে ব্যক্তিমালিকানা বহুতল ভবন।

পাশের সড়কের খালের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে আবাসিক স্থাপনা। স্থানীয় সূত্র জানায়, খালপাড়ের বাড়ির মালিকরা স্থাপনা তৈরির সময় খালের দুই থেকে পাচ ফুট করে জায়গা দখল করেছেন।

শেকেরটেকের শ্যামলি হাউজিং, আদাবর-১০ নম্বর, আদাবর-১৬ নম্বর, আদাবর-১৭ নম্বর এলাকায় খালের ওপর আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান দেখা গেছে।

এ বিষয়টি আগেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নজরে এসেছে। খালের জায়গা নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম। গত বছরের শেষ দিকে সেনাবাহিনী খালের (ডিমারগেশন) সীমানা নির্ধারণের কথা থাকলেও সে প্রক্রিয়া এখনো ঝুলে আছে।

এদিকে রামচন্দ্রপুর খালের আরেকটি অংশ পড়েছে শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের পশ্চিম দিকে। এখানে খাল দখলের নৈরাজ্য চরমে। দখলের পেছনে রয়েছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা।

বেড়িবাঁধ মিনা বাজারের কোল ঘেঁষে রামচন্দ্রপুর খালের যে অংশ রয়েছে, তা এখন আর সেভাবে দৃশ্যমাণ নয়। খালের একাংশে গড়ে তোলা হয়েছে লোহার সেতু। নিজস্ব প্রয়োজনে খালের জায়গায় গড়ে তোলা ওই সেতু ব্যবহার করছে শুধু মিনা বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তার পাশে খাল দখল করেছে সাদিক এগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান বেড়িবাঁধ মিনা বাজার সাত মসজিদ হাউজিং এক নম্বর সড়ক ও নবীনগর ১৬ নম্বর সড়ক অংশে খাল দখল করে গড়ে তুলেছে নিজস্ব স্থাপনা। প্রতিষ্ঠানটির সব বর্জ্য ফেলা হয় রামচন্দ্রপুর খালে। বর্জ্য ফেলতে ফেলতে খালের নাব্যতা নষ্ট করা হয়েছে। খালের এ অংশে পানি দৃশ্যমান নয়।

বেড়িবাঁধের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার বা এসটিএসের সঙ্গে লাগোয়াভাবে গড়ে ওঠা জাকের ডেইরি ফার্ম দখল করেছে রামচন্দ্রপুর খালের অংশ। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও বছরের পর বছর খালের জায়গায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ভোগদখল করছে জাকের ডেইরি ফার্ম।

সম্প্রতি খাল উদ্ধারে শক্ত হাতে অভিযানে নেমেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। নগর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বছরের পর বছর ধরে দখলে থাকা কাটাসুর খালের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জায়গা এখন উদ্ধার হওয়ার পথে। খালের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা বহুতল ভবন, মার্কেট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। অভিযান এখনো চলছে। এই খালের আর দুটি শাখাখালের জায়গা রয়েছে দখলদারদের কব্জায়। সেসব জায়গায়ও লাল রঙ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

করপোরেশনের এই উদ্যোগ রামচন্দ্রপুর খালের দখলমুক্ত হওয়ার বিষয়ে আশা জাগাচ্ছে স্থানীয় লোকজনের মাঝে। অন্যদিকে দখলদারদের কপালে চিন্তার রেখা।

রামচন্দ্রপুর খালে অবৈধ দখল বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা একদিক থেকে কাজ শুরু করেছি। অন্যদিক দিয়ে শেষ করব। এক দিনের মধ্যে তো সব করতে পারব না। পর্যায়ক্রমে খালের উপরে দখল যারাই থাকবে, তাদের উচ্ছেদ করা হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, খালের দখলদার উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে সবকিছুই দখলমুক্ত করা হবে। প্রত্যেকটা জায়গায় আমরা হিট করব। এর আগে আমরা শুধু দখলমুক্ত করেছি, এবার দখলমুক্তির পাশাপাশি খাল খনন ও পানিপ্রবাহ চালুর কাজ করেছি।’

(ঢাকাটাইমস/২ফেব্রুয়ারি/কারই/কেআর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

সবার সহযোগিতায় এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে চান মেয়র তাপস

মতিঝিলে ভুয়া ডিবি আটক

মিরপুরে অটোরিকশা চালকদের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, ৪ মামলায় আসামি ২৭০০ 

সারাদেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি অটোরিকশা চালকদের

২৫ মে বঙ্গবাজার বিপণিবিতান নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

দুই পুলিশ বক্সে আগুন, প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা: ডিসি জসিম উদ্দিন

কাঁচা মরিচের বাজারে আগুন, ১০ দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ

নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে মেয়র আতিকের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের বৈঠক 

কালশীতে পুলিশের সঙ্গে অটোচালকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

জামায়াত-বিএনপির সহযোগিতায় পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়েছে: ইলিয়াস মোল্লা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :