ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচন

ব্যালটে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার ভিডিও ভাইরাল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ২২:৫২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার নিশ্চিত জয়কে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ভিডিওটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুটি বুথের।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের এক মহিলা সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সামনে তিনজন দাঁড়িয়ে আছেন। সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তাদেরকে একের পর এক ব্যালট ছিঁড়ে দিচ্ছেন। এক যুবক বার বার বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ দিয়ে ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। পাশে থাকা আরেক যুবক ব্যালট ভাঁজ করছেন।

ভিডিওতে আরেকটি বুথের চিত্র দেখা যায়। সেখানে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন আরেকজন নারী কর্মকর্তা। তিনি হেসে হেসে একের পর এক ব্যালট পেপারের পেছনে স্বাক্ষর করে যাচ্ছেন। তার সামনে তখন পাঁচ-ছয়জন যুবক। ‘ব্যালটে সিলের কালি হয়নি’- এক যুবকের এমন কথার প্রেক্ষিতে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেন, 'আরে কালি হইছে।' তখন এক যুবককে বলতে শুনা যায়, আমার উচিত ভোট দিতে পারছি না।

সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার পাশে থাকা এক যুবকের গলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান আলমের ছবি সম্বলিত একটি কার্ড ঝুলছিল। সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা স্বাক্ষর শেষে একে একে ব্যালট ছিড়ে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন টেবিলে রেখেই প্রকাশ্যে ব্যালটে নৌকা প্রতীকে একের পর এক সিল মারেন। তখন এক যুবককে বলতে শুনা যায়, 'সিল মারো ভাই সিল মারো'। সেসময় আরেক যুবক বলেন, 'নৌকা মার্কায় মারো।'

সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে নৌকা প্রতীকের আরেক সমর্থক বলেন, ‘আরে আপনে ছিড়েন না। ৮-১০টা ছিড়া লাইন না। ছিড়া দিয়া দেন। মাইরা দেই। এরপর আপনি লেখেন আস্তে আস্তে। আপনি ছিড়েন ১০-২০টা। আমরা সিল মারি।’ এ সময় নৌকা প্রতীকের এক সমর্থক বলেন, ‘আরে আমি দিমু, টাস টাস টাস। আরেক সমর্থক বলেন, 'আস্তে আস্তে।'

ভিডিওতে আবার প্রথম দেখা যাওয়া ওই নারী সহকারী সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বুথের চিত্র দেখা যায়। এ সময় ওই নারী সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আরেকজন নারী পোলিং এজেন্টও সহায়তা করেন। তারা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে দিচ্ছেন। নৌকার সমর্থকরা ব্যালটে প্রকাশ্যে সিল মারেন। নারী সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোটার নম্বর ২৩৯ কি না জানতে চাইলে নৌকার সমর্থকরা বলেন, না ১৩৯। সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা একের পর এক ব্যালট ছিঁড়ে দিলে একজন যুবকই বার বার বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ দিয়ে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারেন।

এ বিষয়ে নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা বলেন, সিল মারার মহড়া সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আমি নিজে আশুগঞ্জ উপজেলার ১৫/২০টি কেন্দ্রে ঘুরেছি। সেখানে ভোটারদের লাইন ছিল না, ভিড় ছিল না। সেখানে নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, পুলিশ আর আনসার ছাড়া কিছুই দেখি নাই। সেখানে কেন্দ্রগুলো থেকে হাজার হাজার ভোট সংগ্রহ করা হয়েছে। আশুগঞ্জের কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে আমি হতাশ হয়েছি। তারা যেভাবে হাজার হাজার ভোট নিয়ে গেলো তা এই সরকারের অধীন পরবর্তী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এটি একটি অস্বচ্ছ নির্বাচন। এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশন নিজস্ব উদ্যোগে ফলাফল স্থগিত করেছে। পরে আমি কোন কোন সেন্টারে অনিয়ম হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করে একটি দরখাস্ত প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর দাখিল করেছি।

জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন অফিসারের জ্ঞানগোচরেই এসব ঘটেছে। আবার তাদেরকেই তদন্তের ভার দেওয়াতে আমি বিস্মিত। একটি কথাই বলব, যদি জনগণের ভোট হতো, সঠিক ভোট হতো আমি বিপুল ভোটে জয়ী হতাম। আমার বিজয়কে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু নৌকা প্রতীকে ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা কলার ছড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট।

(ঢাকাটাইমস/০৯নভেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :