এবারও রমজান ঘিরে বাজারে চক্র, কারসাজি ঠেকাতে মজুদে জোর

রুদ্র রাসেল, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:৩৯ | প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৯

আরও দুমাস বাকি রমজানের। এরই মধ্যে বাজারে কলকাঠি নাড়া শুরু করেছে সেই সিন্ডিকেট। রমজানকে টার্গেট করে ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।

তবে এই চক্র ঠেকাতে এখনো প্রস্তুতি নেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাড়ানো হয়নি টাস্কফোর্সের তৎপরতা। এ বিষয়ক কোনো বিশেষ সেলও গঠন করা হয়নি বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন। তারা বলছেন, এ মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ হয়েছে। তিনি রবিবার অফিস করা শুরু করলে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে নতুন সরকারের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ঢাকা টাইমসকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রবিবার থেকে অফিস করবেন জানিয়ে নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি জোর দেব পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির বিষয়ে। বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলে কারসাজি করার সুযোগ থাকে না।

শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক মাস আগে যে ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ২১০ টাকা। আর সোনালি মুরগির কেজি ৩০০ টাকা। বেড়ে গেছে গরুর মাংসের দামও। কোনো কারণ না থাকলেও সরকার নির্ধারিত ৬৫০ টাকায় এখন আর বিক্রি হচ্ছে না গরুর মাংস। তা এখন কেজি ৭৫০ টাকা। আর রমজান কেন্দ্র করে বেড়েছে খেজুরের দাম।

ক্রেতারা বলছেন, সরকার এই মুহূর্তে বাজারে নজর না দিলে রমজান পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য আরও বেড়ে যাবে। এখনই পণ্যমূল্য হাতের নাগালের বাইরে, এর ওপর আরও দাম বাড়লে দুর্দশার অন্ত থাকবে না।

এ বিষয়ে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রতি বছরই রমজান ঘিরে বাজারকে একটি চক্র অস্থিতিশীল করে তোলে। এখনই এ চক্রকে থামাতে হবে। নইলে স্বল্প আয়ের মানুষের রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সামর্থ্য থাকবে না। আর নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য রমজান ও রমজান শেষে ঈদের খরচ সামাল দেওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে।

এছাড়া রমজান ঘিরে বেড়ে গেছে চাল, ছোলা, ডাল, বেসন, মাছ, মাংস ও খেজুরসহ কয়েকটি পণ্যের দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। এখনই এ অবস্থা হলে, রোজার সময় সব নাগালের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে এসব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে নতুন সরকারকে।

বিক্রেতারা জানান, মূলত আড়তদার ও মিল মালিকদের কারসাজিতে বাড়ছে দাম। আর ক্রেতাদের মতে, সিন্ডিকেট করে রোজার আগেই বাজার অস্থির করে তুলেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারে কথা হয় পলাশ হোসাইন নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে রোজার সময় সব পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে।

রাকিব নামে আরেক ক্রেতা বলেন, নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, নতুন বছরে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সরকার চাইলে রোজার সময় নিত্যপণ্যের দাম নাগালে রাখতে পারে। এজন্য দরকার কেবল কঠোর নজরদারি।

সাইফুল নামে কারওয়ান বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, আড়তদার ও মিল মালিকরা সিন্ডকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন। বাড়তি দামে পণ্য কেনায়, বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে গরিব মানুষের কিছুটা কষ্ট হলেও, খুচরা ব্যবসায়ীরা নিরুপায়।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে আাটা-ময়দা, ডাল-ছোলা ও বেসনের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজিতে এসব পণ্য ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। খোলা আটা ৫০ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। আর কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, আর মসুরির ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এছাড়া কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ছোলা ৯৫ টাকা ও ছোলার ডাল ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। আর কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাঙ্কর ও খেসারির ডাল বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৭০ টাকা এবং ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।

ডালের দাম বাড়ায় বেড়েছে বেসনের দামও। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি বেসন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আর আমদানি শুল্ক অর্ধেক কমানোর পরও বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে চিনি পাওয়াই যাচ্ছে না। শুল্ক কমিয়ে লাভ নেই। পাইকারি পর্যায়ে দাম না কমলে খুচরা পর্যায়েও দাম কমবে না।

সপ্তাহ ব্যবধানে আবারও বেড়েছে চালের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুসপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মোটা ও সরু চালের দাম। প্রতি কেজি আটাইশ ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা, পাইজাম ৫২ থেকে ৫৩ টাকা ও মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়ে গেছে গরু ও মুরগির মাংসের দাম। প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগি ও লাল লেয়ারের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। আর গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। আর প্রতি কেজি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।

এদিকে, ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে খেজুরের দাম বেড়েছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিকেজি দাবাস খেজুর ৪৫০ টাকা, জিহাদি খেজুর ২৪০ টাকা, আজওয়া খেজুর ৯০০ টাকা, বড়ই খেজুর ৪০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকা ও মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা।

অন্যদিকে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্যের মজুদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ শফিকুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, নতুন প্রতিমন্ত্রী কার্যক্রম শুরু করলে বাজার নিয়ন্ত্রণ তৎপরতা আরও জোরালো হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা মজুদ বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছি। ইতোমধ্যেই রমজানসংশ্লিষ্ট ৮টি পণ্য বাকিতে আমদানি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। আমরা পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে চাই। তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া আমাদের নিয়মিত অভিযান ও মনিটরিং অব্যাহত আছে।’

৮টি পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ

রোজায় ভোগ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিতে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি এবং খেজুর বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এসব পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করা যাবে। এই সুবিধার সুযোগ থাকবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/এমএইচ/আরআর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :