সুজন-সালাম এবারও অবহেলিত, রাজনীতির মাঠে তবুও সক্রিয়  

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৮

চট্টগ্রামে রাজনীতিতে দুজনই আপসহীন ও ত্যাগী। মাঠের রাজনীতিতে যাদের ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে নগরবাসী জানে। তারা হলেন, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন ও এম এ সালাম।

অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকায় দুজনকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তাদের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা অনেকে হয়েছেন সাংসদ। শুধু তাই নয়, তাদের চেয়ে অনেক কম সময় রাজনীতিতে এসে হয়েছেন মন্ত্রীও। কিন্তু তাদের প্রাপ্যের হিসাবের খাতা একেবারেই শূন্য। মেলেনি একবারও সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ। মনোনয়ন পেয়ে উল্টো ফেরত দিতে হয়েছে বারবার।

মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ১৪ দলের চট্টগ্রাম নগর সমন্বয়ক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনের রাজনীতির হাতেখড়ি উত্তর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ৫৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়ার কয়েকদিন পর তা আরেকজনকে দিয়ে দেন।

এরপরও দমে যাননি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন। রাজনীতির মাঠে সক্রিয় কাজ করে গেছেন। চসিকের প্রশাসক হলে অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন তিনি মেয়র হবেন। তাকে প্রার্থী না করায় সেখানেও বঞ্চিত হয়েছেন। অনেকে মনে করেছিলেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন। পরে ঘোষিত তালিকায় তার নাম না পেয়ে হতাশ হন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।

মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘২০০৮ সালে একবার চট্টগ্রাম-১১ আসনে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও কয়েকদিন পর তা পরিবর্তন করে অন্যজনকে দিয়ে দেই। এরপরও দলের স্বার্থে আমি এটা মেনে নিয়েছি। ২০১৮ সালে আমাকে মনোনয়নের চিঠি দিতে ঢাকায় ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু পরে আমাকে আর চিঠি দেওয়া হয়নি। এরপরও আমি হতাশ হইনি। দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতি করে যাচ্ছি।’

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনের মতো রাজনীতিতে আরেক বঞ্চনার নাম এম এ সালাম। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে একবার নির্বাচনে হেরে যান। বাকি দুবার মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু দলের মিত্র জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছে।

এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। প্রত্যাহার করতে হয়েছে মনোনয়নপত্র। এর মধ্যে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমএ সালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ফলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এমএ সালাম। যথানিয়মে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।

কিন্তু জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার কারণে তাকে এবারও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে হয়। ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের টানা ২৮ বছর সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। চার বছর আগে সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এখনও এই পদে রয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি হাটহাজারী থেকে নির্বাচন করেন এমএ সালাম। এরপর ২০০৮ এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের আসন্ন নির্বাচনসহ দুইবার মনোনয়ন পেয়েও জোটের কারণে প্রত্যাহার করে নেন এম এ সালাম।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্কুলছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু এম এ সালামের। এরপর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পাননি তিনি। এ নিয়ে হতাশা রয়েছে তার অনুসারীদের। তার অনুসারীরা আশা ও বিশ্বাস করেন, ত্যাগের ফল মধুর হয়। আমরা সেই আশায় রইলাম।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম বলেন, ‘বারবার মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন করতে না পারার কষ্ট থাকবে। এবারও দেশ ও দলের স্বার্থে আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তারপরও বলবো- আমি কি হই বা না হই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন ও শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে আজীবন আওয়ামী লীগ করে যাব। দল-মত, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে হাটহাজারীবাসীর জন্য আমার দরজা আমৃত্যু খোলা থাকবে। তাদের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক, আমি আজীবন তাদের একজন হয়ে থাকবো।’

(ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :