হরিরামপুরে পেঁয়াজ চুরির আশঙ্কায় রাত জেগে পাহারা

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
| আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:২২ | প্রকাশিত : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:১৯

হঠাৎ ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে দিলে দেশের বাজারে দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় পেঁয়াজ। এর প্রতিবাদে পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দেয় সাধারণ মানুষ। ফলে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম কমাতে বাধ্য হয়। ২’শ থেকে আড়াই’শ টাকা কেজির পেঁয়াজ নেমে আসে ১২০ টাকায়। কেজিতে কমে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ফলে কিছু স্বস্তি নেমে আসে জনজীবনে।

তবে পেঁয়াজের দাম কমার খবরে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও ক্ষেত থেকে চুরির আতঙ্ক কমেনি মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চাষিদের। তারা রাত জেগে চুরিরোধে পাহারা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, ভালো দামের আশায় জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজের বীজ রোপণ করেছিলেন উপজেলার অনেক চাষি। এখন পেঁয়াজের আকার বড় হয়ে উঠেছে। আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হয়ে উঠবে। তবে বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার ভালো হওয়ায় এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেতে হানা দিতে শুরু করেছে চোরের দল। তাই চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষ করে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাহিরচর গ্রামের চাষিরা স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পালাক্রমে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন। ক্ষেতের পাশে ছোট ছোট অস্থায়ী টং ঘরের মতো ঝুপড়ি নির্মাণ করছেন। সকালের সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত পেঁয়াজ ক্ষেতের সেই ঝুপড়িতেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

নিজের পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দেওয়া বাহিরচর গ্রামের মঙ্গল মনি দাস বলেন, এ বছর ৪২ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। কয়েকদিন আগে আমার পাশের ক্ষেত থেকে এক কৃষকের অনেক পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। এরপর থেকেই আমরা রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছি। এখন পেঁয়াজের আকার বড় হলেও তোলার উপযোগী হয়নি। আর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হয়ে উঠবে। কিন্তু চোরের ভয়ে এখনই আমাদের পেঁয়াজ তুলল ফেলতে হচ্ছে। সঠিক সময়ে তুলতে পারলে আমার এই জমিতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজ হতো কিন্তু চুরির ভয়ে আগে ওঠানোর কারণে ৩৫ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ হবে।

কৃষক মঙ্গল মনি দাসের মতো একই কথা জানিয়েছেন বাহিরচরের আরও অনেক চাষি।

একই এলাকার কৃষক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, আমি এবার মোট ৪০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। ৪ শতাংশ একটি জমির ১ শতাংশ পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। চোরের ভয়ে দ্রুত পেঁয়াজ তুলতে হচ্ছে। পেঁয়াজ আরও কিছুদিন পরে তুলতে পারলে ভালো হতো। কিছুদিন আগে রাতে আমার পাশের জমি থেকে পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা।

তিনি আরও বলেন, চুরির বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানানো হলে তিনি সবাইকে পাহারা দিতে বলেছেন।

কৃষক লাল খান এর ছেলে আ. মালেক বলেন, আমরা ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। প্রায় ৪-৫ শতাংশ জমির পেঁয়াজ চুরি হয়ে গেছে। চুরি হওয়ার পর আমরা রাতদিন পাহারা দিচ্ছি। পরিপক্ক না হলেও চুরির ভয়ে পেঁয়াজ তুলতে বাধ্য হচ্ছি।

বাহিরচর গ্রামের মামুন রহমান জানান, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাতের আঁধারে এমনকি দিনদুপুরেও ক্ষেতে চোরের ভয়ে শঙ্কিত চাষিরা। পেঁয়াজের দাম বাড়লেই পেঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে গাছের গোড়ায় পেঁয়াজগুলো পরিপক্কতা পাবে। কিন্তু চুরির ভয়ে অনেক কৃষক অপরিপক্ক পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছেন।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য আ. কুদ্দুস আলী বেপারী পেঁয়াজ চুরির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি পেঁয়াজ চুরির ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই চাষিদের যার যার ক্ষেত পাহারা দিতে বলি। পাহারা চলমান রয়েছে। এখন আর চুরি হচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, এ অঞ্চলের জমি পেঁয়াজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে কন্দ পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। চাষিরা পেঁয়াজ চাষে লাভবান হবেন।

এ বিষয়ে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ নুর এ আলম জানান, ক্ষেতে পেঁয়াজ চুরি ঠেকাতে সম্মিলিত প্রতিরোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :