এল নতুন বছর: মানুষ ভুলতে চায় বিগত দিনের ক্ষত, নিয়ন্ত্রণ চায় দ্রব্যমূল্যের

তাওহিদুল ইসলাম, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৭ | প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৪

আজ জানুয়ারি। নতুন বছর ২০২৪ সালের যাত্রা শুরু। পুরনো ভুল-ত্রুটি, দুঃখ-কষ্ট ভুলে সবাই নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান আগামী দিনগুলোতে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বাজারের দ্রব্য মূল্যের নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা কারিকুলামসহ নানা সমস্যার সমাধান চান সাধারণ জনগণ।

নতুন বছর উপলক্ষ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে ফেলে আসা এক বছরের অভিজ্ঞতা নতুন বছরের প্রত্যাশার কথা জেনেছে ঢাকা টাইমস।

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের শুরু থেকে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা, বাজারের অস্থিরতা শিক্ষার নতুন কারিকুলাম নিয়ে তারা ছিলেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। এসব থেকে নতুন বছরে মুক্তি চান তারা।

রাজধানীর মালিবাগের একটি ফুটপাতে চা, পান-সিগারেটের দোকান করেন রিয়াজ আলি (৩১) তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, দোকান চালিয়ে সংসার চালাতে হয়। ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করাতে হয়। কিন্তু এই দোকান চালাতে গিয়ে প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। দৈনিক মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিতে হয় কয়েকজনকে। কেউ দিন শেষে এসে চাঁদার টাকা নিয়ে যায়, কাউকে মাস শেষে দিতে হয়।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বছর আসবে যাবে- কিন্তু আমাদের এই চাঁদা দেওয়া থেকে মুক্তি নেই। চাঁদা দেওয়া না লাগলে দোকানের কামাই দিয়ে ভালোভাবেই চলা যেত। নতুন বছরে যদি কেউ কিছু আমাদের জন্য করতে চায়, তাহলে বলব যাতে এই চাঁদাবাজি বন্ধ করে।

জীবিকার তাগিদে বরগুনার তালতলি থেকে ঢাকায় এসে রিকশা চালান হামিদ মিয়া (৪০)

বাংলামোটরে বসে হামিদ মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, আগে গ্রামের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে মা, বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে শান্তিতেই ছিলাম। কিন্তু গ্রামে এখন দিনমজুরের কাজ কম। তাই ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করি। কিন্তু এখানেও আর ভালো আয় নাই। আগে বাসা ভাড়া করে থাকতাম। এখন রিকশার ওপরেই রাত কেটে যায়।

স্কুলপড়ুয়া নাঈমের মা জাহনারা বেগমের মাথায় ছেলের পড়াশোনা নিয়ে রাজ্যের চিন্তা। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, বর্তমান যুগে ছেলে-মেয়েদের বাসায় শাসন করা যায় না। এরপর আবার স্কুল-কলেজ থেকে বেত উঠিয়ে দিছে। এখন বাসা, স্কুল কলেজ আর কোথাও শাসনের ছোঁয়া নেই। ফলে ছেলেরা আজকাল কিশোর গ্যাং হয়ে যাচ্ছে।

জাহনারা বেগম তার ছেলেকে নিয়ে বলেন, ২০২৩ সালে শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে যে সমালোচনা শুরু হয়েছে, তা শিক্ষার্থীদের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ছে। এক একজন দায়িত্বে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর নতুন নতুন কিছু চাপিয়ে দেয়। এসব নতুন বিষয়ে শিক্ষক থাকে না, প্রশিক্ষণ থাকে না। ফলে ছেলে-মেয়েরা বই বুঝে না পড়ে মুখস্ত করে। তাদের মধ্যে মুখস্থ বিদ্যা ছাড়া আর কিছুই নেই।

শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আমান উল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, বর্তমানে আমরা একাডেমিক ১৬-১৭ বছর পড়া শেষ করেও আবার নতুন করে চাকরির জন্য পড়তে হয়। যা আমাদের সময় নষ্ট করে অর্থের অপচয় করে। তিনি বলেন, আমাদের একাডেমিক পড়াশোনায় ভাষার ওপর তেমন জোর দেওয়া হয় না। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে ভাষার দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো কোনো চাকরি করতে গেলে ভাষার ওপর দক্ষতার বিকল্প নেই। অথচ দেশের শিক্ষার্থীদের ভাষার ওপর জ্ঞান নেই বললেই চলে। তারা পড়াশোনা শেষ করে তারপর ইংরেজি শিখতে আবার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়! আমি বলব, প্রাইমারি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অন্তত দুইটা ভাষার সাবজেক্ট প্রতিটা ক্লাশে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। কোনো একটা শিক্ষার্থী যদি ভালো ইংরেজি জানে তার অন্তত বেগ পেতে হয় না।

নতুন বছর প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মী হাসান মেহেদী বলেন, ২০২৩ সালের প্রাপ্তির চেয়ে হারানোর ভাগটাই ছিল বেশি। জীবনের প্রতিটি গল্পের শেষাংশে যেন এক অসমাপ্ত ঘটনার জন্ম দিয়েছে। হারিয়েছি অনেক কাছের মানুষ। শুরুর দিকে সুখময় জীবন থাকলেও শেষটা যেন শেষের মতই চলে গেল। জীবনের অনেক কিছুই অসামাপ্ত রয়ে গেছে। তাই নতুন বছরে সকল অসমাপ্তকে সমাপ্ত করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে চাই। সকল ভুলগুলোও ভুলে যেতে চাই।

পঞ্চাশোর্ধ্ব আজিজুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০২৩ সালের শুরু থেকেই বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। সীমিত ইনকাম দিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজারে (মালিবাগ রেল লাইন ঘেষা কাঁচা বাজার) শীতকালীন সবজির দামটা পর্যন্ত কমেনি। আমাদের মতো দরিদ্ররা সরকারের কাছে বেশি কিছু চায় না। শুধু বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেই আমরা খুশি। নতুন বছরে সরকারকে বলব যাতে আমরা বাজারে এসে স্বস্তিতে বাজার করে ফিরতে পারি।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক উত্তাপে সাধারণ মানুষ আমরা ভোগান্তিতে পড়ি। এমপি-মন্ত্রীরা মুখে বলে দেশের মানুষের সেবা করতে রাজনীতি করেন। কিন্তু বাজারে আসলে তাদের সেবা করার নমুনা দেখতে পাই।

(ঢাকাটাইমস/১ জানুয়ারি/টিআই/বিবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :