মিয়ানমারে সংঘাতে চীনের ভূমিকা কী?

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:০৭ | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪৭

মিয়ানমারের পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা রাখাইন রাজ্যসহ দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জান্তা বাহিনীর লড়াই এখন তুঙ্গে। এই সংঘাতের আঁচ মিয়ানমারের সীমান্ত ছাপিয়ে বাংলাদেশেও লাগছে গত বেশ কয়েকদিন ধরে।

পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যেকার তুমব্রু ঘুমধুম সীমান্তের তিনটি স্থান দিয়ে রবিবার দুপুর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা। সোমবার রাত পর্যন্ত ১১৩ জন প্রবেশের তথ্য দিয়েছে বিজিবি সদর দপ্তর। তবে এই সংঘাত কীভাবে শেষ হবে তার কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, প্রভাবশালী দেশ চীন এখানে কী ভূমিকা রাখছে?

মিয়ানমারের ওপর একটা সময় চীনের বেশ প্রভাব ছিল। কিন্তু সে প্রভাব এখন অনেকটাই খর্ব হয়েছে। তারপরেও মিয়ানমার সামরিক জান্তা সরকার ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থতাকারী হিসেব রয়েছে চীন।

গত জানুয়ারি মাসে চীনের মধ্যস্থতায় তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও জান্তা সরকারের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু সেটি কোনো ফল দেয়নি। এরপরেও বিভিন্ন স্থানে সংঘাত অব্যাহত আছে। তবে এই অস্ত্রবিরতি চুক্তি শুধু চীন সীমান্ত সংলগ্ন শান প্রদেশের জন্য।

এই প্রদেশটিতে ১৯৪৮ সালে মিয়ানমারের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সংঘাত চলমান আছে। এছাড়া এ প্রদেশটিতেই বিদ্রোহীরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও শান প্রদেশে বিক্ষিপ্ত সংঘাত চলছে। তবে দেশের অন্য জায়গায় এই যুদ্ধবিরতি কোনো কাজে লাগেনি।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চীন এখানে মধ্যস্থতা করেছে তার নিজের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য। এখানে মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মুখ্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক থারাফি থান এশিয়ান টাইমসে এক নিবন্ধে লিখেছেন, মিয়ানমারের অস্থিরতা যাতে সীমান্ত ছাপিয়ে চীনের ভেতরে না যায় সে জন্য তারা বেশ উদ্বিগ্ন।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের সীমান্তে তাদের অধিবাসীদের ক্ষতি না করা এবং মিয়ানমারের ভেতরে চীনের প্রকল্পে যারা কাজ করছে তাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে নিশ্চয়তা দিয়েছে উভয়পক্ষ। এখানে উভয় পক্ষ বলতে সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের সৈন্যদের বোঝানো হয়েছে।

এদিকে মিয়ানমার জান্তা সরকারের ওপর চীন ‘খুশি নয়’ বলে উল্লেখ করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। কারণ চীনের বিভিন্ন অপরাধী চক্র শান প্রদেশে কিংবা মিয়ানমারের ভেতরে বসে নানা ধরনের সাইবার অপরাধ, মাদক, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি চীনের জন্য সমস্যা তৈরি করলেও মিয়ানমারের জান্তা সেটি দমনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

অন্যদিকে মিয়ানমারের যুদ্ধবিরতি চীনের চাওয়ার উপর এখন আর খুব বেশি নির্ভর করে না। কারণ ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, মিয়ানমারে যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের সঙ্গে চীনের ভালো সম্পর্ক থাকে। এর আগে অং সান সুচির সরকারের সঙ্গেও তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে মিয়ানমারে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে সেটি চীন কিভাবে দেখবে তাও একটি বড় বিষয়। এক্ষত্রে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকেও আমলে নিতে পারে চীন। এছাড়াও চীনকে মিয়ানমারের অস্ত্রের প্রধান উৎস হিসেবে অভিহিত করেছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১৩ সাল থেকে মিয়ানমারের ৬৮ শতাংশ অস্ত্রের আমদানি হয়েছে চীন থেকে। সাঁজোয়া যান, ভূমি থেকে আকাশের মিসাইল প্রযুক্তি, রাডার ও মানববিহীন ড্রোনসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ছিল এর মধ্যে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভ্যুত্থানের পর গত বছরের অক্টোবেরে উত্তর মিয়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী—মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই শুরু করে।

গত ডিসেম্বরের মাঝের দিকে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশের বেশিরভাগ শহরের দখল নেয় বিদ্রোহীরা। ওই সময় আরাকান আর্মি (এএ) জানায়, তারা রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৫টি এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরের দখল সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। এই দুই রাজ্যে সেনাবাহিনীর ৩০০টি সামরিক চৌকির দখলও নিয়েছে তারা।

(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমলো ৪৯ টাকা 

আইএমএফের জ্বালানি বিষয়ক পরামর্শের সঙ্গে একমত নয় ক্যাব

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়, এটা দুর্ভাগ্যের: প্রধানমন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিশ

মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে থাইল্যান্ডও উদ্বিগ্ন: প্রধানমন্ত্রী

থাইল্যান্ড সফর সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী 

থাইল্যান্ড সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী 

তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির লাশ দেশে আসছে দুপুরে

চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ঝড়ের আভাস

থাইল্যান্ড সফর: আজ সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :