কক্সবাজারবাসীর রেলের স্বপ্ন রূপ নিচ্ছে বাস্তবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:১৭ | প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৮

কক্সবাজারে রেল চলবে- কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এটি। পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যাওয়া পর্যটকদেরও চাওয়া ছিল এটি। অবশেষে সেই প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। আগামী জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে রেলে চেপে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়া যাবে বলে আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পরিকল্পনা মতো কাজ এগোলে এ বছরেই রেল যাবে কক্সবাজারে। যদিও ২০২৪ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের সব কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলছেন, রেল চালু হলে পর্যটকদের যাতায়াত সহজ হবে। পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ও কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহন করা যাবে। এতে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণে পর্যটন নগরীর সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার পাশাপাশি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের দাবি দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়।

গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেলপথের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

রেল যোগাযোগের এই নেটওয়ার্ক চালু হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রেনে চড়ে সহজে কক্সবাজারে যাতায়াত করা যাবে। তেমনি দেশের সব প্রান্তে সহজেই যেতে পারবেন কক্সবাজারবাসীও। সহজ হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন কাজ। এতে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে বলেও আশা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রেলপথ সচল হলে সবদিক দিয়ে ঘুরে যাবে কক্সবাজার অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাকা।

সম্প্রতি কক্সবাজারে রেল প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন শেষে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালু হবে। তখন সারাদেশ থেকে মানুষ ট্রেনে চড়ে সরাসরি কক্সবাজারে যাবেন।

রেলপথমন্ত্রী কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনের নির্মাণ কাজ দেখার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আরও বলেন, ‘একসময় এটি স্বপ্ন ছিল, এখন সেটা বাস্তবায়নের পথে। সারাদেশের মানুষ ট্রেনে পর্যটন নগরী কক্সবাজার যাওয়ার অপেক্ষায়।’

রেলমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের জন্য ট্যুরিস্ট কোচের আদলে উন্নতমানের কোচ দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। এজন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি কোচ কেনা হবে, যেগুলোর জানালা সুপ্রশস্ত। মানুষ অনায়াসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পাবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমল বলেন, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারের সম্মতি না থাকায় আপাতত রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ হচ্ছে না।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদরসহ স্টেশন থাকছে আটটি। এজন্য সাঙ্গু, মাতামুহুরি ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় সেতু। এছাড়া রেলপথে তৈরি হয়েছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট ও ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।

ঝিনুকের আদলে আইকনিক রেল স্টেশন

কক্সবাজার সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেল স্টেশন। স্টেশনটিকে সৈকতের ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হচ্ছে। স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয় তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান আছে। নির্মাণাধীন আইকনিক ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। এর পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ১০০ কিলোমিটার রেললাইনে এরই মধ্যে ৫০ কিলোমিটারের বেশি এখন দৃশ্যমান। বেশির ভাগ ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে সেগুলো আগামী কয়েক মাসেই শেষ হবে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তবে আমরা চেষ্টা করছি ২০২৩ সালের জুন-অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করতে। সেই সঙ্গে রেল স্টেশনগুলোর নির্মাণকাজও চলমান আছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সদস্য ও তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের চেয়ারম্যান লায়ন এমএন করিম বলেন, শতাব্দীকালের দাবি কক্সবাজার রেলপথ এখন স্বপ্ন নয়-বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় চলতি বছরেই রেল আসার প্রতীক্ষায় রয়েছে কক্সবাজারবাসী। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল চালু হলে অবশ্যই দরিয়ানগরের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘পর্যটন নগরীর সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে।’

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডোয়েল গেজ ও সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।

(ঢাকাটাইমস/০৯জানুয়ারি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :