ভুবনেশ্বর নদে কুমির উদ্ধার অভিযানে বন বিভাগের কর্মকর্তারা

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:১৬
ভুবনেশ্বর নদে কুমির উদ্ধার অভিযানে বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা

ফরিদপুরের ভুবনেশ্বর নদের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় দুইটি কুমিরের দেখা মিলেছে। এতে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে রবিবার দুপুর থেকে কুমির উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বুধবার (১১ অক্টোবর) ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের ব্যাপারী ডাঙ্গী গ্রামের লোকমান মাতুব্বরের বাড়ির কাছে ভুবনেশ্বর নদে একটি কুমির দেখতে পায় স্থানীয়রা। কুমিরটি দেখে এলাকাবাসিকে সতর্ক করতে এশার নামাজের পর মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়।

এরপর কুমিরটি ওই এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরে তেলিডাঙ্গি এলাকায় অবস্থান করছিল। শনিবার সেখান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা এলাকায় দেখতে পায় স্থানীয়রা।

নদের পানিতে কিছু সময় পরপর মাথা তুলে আবার ডুব দেয় কুমিরটি। কুমিরটি দেখতে নানা বয়সী উৎসুক মানুষকে রাস্তার দুই পাশে ভিড় করতে দেখা গেছে।

পাটপাশা এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, শনিবার সকালে ভুবনেশ্বর নদে মহিলারা গেলে দুটি কুমির দেখতে পায়, ভয়ে চিৎকার দিয়ে তারা চলে আসে। পরে আমরা গিয়ে দেখি দুটি কুমির জলের মধ্যে রয়েছে। একটি কালো, অপরটি সাদা। মাথা ভাসিয়ে রাখছে, পাঁচ মিনিট পর পর ডুব দিচ্ছে, আবার মাথা তুলছে।

নদের পানিতে নদী পাড়ের মানুষ, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা গোসল করার পাশাপাশি গবাদি পশু গোসল করানো হয়। এখনও কুমিরটি উদ্ধার না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে তারা। ভয়ে কেউ নামছে না নদের পানিতে।

স্থানীয় বাসিন্দা আরতি রানী বিশ্বাস বলেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের এলাকায় কুমির দেখা গেছে। আজ রবিবার সকাল থেকে দেখতে পাচ্ছি না। কালো কুমিরটি অনেক বড়, সাদাটা একটু ছোট।

তিনি আরো বলেন, গোসল করতে নদে আমরা এখন আর কেউ ভয়ে যাচ্ছিনা। খুব ভয়ের মধ্যে আছি। ছেলে-মেয়েদেরও বলে দিয়েছি নদে না যেতে।

আরেক বাসিন্দা করিম শেখ বলেন, গত বুধবার চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের ব্যাপারী ডাঙ্গী গ্রামের লোকমান মাতুব্বরের বাড়ির কাছে ভুবনেশ্বর নদে কুমির দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরদিন সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে তেলিডাঙ্গি এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পাটপাশা এলাকায় ভুবনেশ্বর নদে দেখতে পাওয়া যায়। রবিবার সকাল থেকে এখানে পাওয়া যায়নি। আরো দূরে চলে গেছে।

আলিয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য মো. বকলুকার রহমান জানান, কুমির দেখা গেছে এমন সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে এসে কুমির দেখতে পাই। পরে থানা ও বন বিভাগকে বিষয়টি অবগত করি।

তিনি আরো জানান, এলাকার সকলকে নদে না নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কুমিরটি উদ্ধারে বন বিভাগের কর্মকর্তারা এসেছেন। এখানে জেলেদের আনা হয়েছে, জালও আনা হয়েছে। কুমিরটি উদ্ধার করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

ইউপি সদস্য আরো জানান, কুমিরটি বেশিদূর এগোতে পারবেনা। কারণ সামনে বাধ দেওয়া আছে, সেখানে বাধা পাবে। ভাটিতে এগিয়ে গেলেও সেখানেই থেমে পরবে। একারণে এই এলাকার মধ্যে কুমিরটি রয়েছে, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আমরাও কুমির উদ্ধারের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।

এদিকে কুমিরটি উদ্ধারে রবিবার দুপুরে বন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল সদর উপজেলার পাটপাশা এলাকায় আসেন। ওই স্থান পরিদর্শন করেন। কিন্তু কুমিরটিকে আজ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এখনও ওই এলাকায় অবস্থান করছেন তারা।

বন অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি

সংরক্ষণ বিভাগের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মো. মফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, ভুবনেশ্বর নদে কুমির দেখা গিয়েছে এমন সংবাদ শুক্রবার আমরা পাই। এরপর ফরিদপুরের বর্ন কর্মকর্তাকে কুমিরের অবস্থান জানাতে বলা হয়।

তিনি আরো জানান, কুমিরের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা খুলনা থেকে কুমির দুইটিকে উদ্ধারের জন্য এসেছি। কিন্তু গতকাল কুমিরটিকে দেখা গেছে, কিন্তু আমরা আজকে দেখতে পাচ্ছিনা। খোঁজ করছি, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বি কে সিকদার জানান, পদ্মা নদী থেকে কুমিরটি চলে এসেছে ভুবনেশ্বরে। এলাকাবাসীকে নদে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

(ঢাকা টাইমস/১৫অক্টোবর/প্রতিনিধি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :