হবিগঞ্জে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৪:৪৩ | প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৪:৩৪

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট জিবধরছড়া এলাকায় ২০২০ সালে একই সঙ্গে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ভুইগড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এছাড়াও ১২টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত দীর্ঘদিন যাবত পলাতক দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার সাইদুর রহমান মানিককে সিদ্ধিরগঞ্জ ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।

রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‍্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় একই সঙ্গে মা ও মেয়েকে হাতমুখ বেঁধে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত ধর্ষক সালাউদ্দিন মিয়াকে গতকাল সিদ্ধিরগঞ্জ ভুইগড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী ও তার মেয়ে চুনারুঘাট জিবধরছড়া এলাকায় বসবাস করতেন। সালাউদ্দিন এবং মামলার অপর আসামি শাকিল ও হারুন একই এলাকায় বসবাস করতেন। শাকিল ও হারুনের সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করতেন সালাউদ্দিন। অধিকাংশ সময় তাদের সঙ্গেই কাটাতেন।

ভিকটিমের পূর্ব পরিচিত শাকিল (পলাতক আসামি) অন্যদের জানান, ওই নারী ও তার মেয়ে ছাড়া তাদের বাড়িতে অন্য কেউ থাকে না। ওই নারীর এক ছেলে অন্যত্র চাকরি করায় বাড়িটি ছিল পুরুষশূন্য। ভিকটিমদের নির্জনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসামিদের মধ্যে যৌনলিপ্সা পূরণের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়।

যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণে তারা ভিকটিমদের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে শুরু করেন। সুযোগ বুঝে পূর্বপরিচিত শাকিল ২০২০ সালের ২ অক্টোবর রাতে ভিকটিমদের বাড়িতে এসে তাদের দরজায় ধাক্কা দিয়ে চাচি চাচি বলে ডাকতে থাকেন। পূর্ব পরিচিত শাকিলের ডাক শুনে ভিকটিমরা ঘরের দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসেন। বাইরে এসে তারা শাকিলের সঙ্গে আরও দুইজন অপরিচিত ব্যক্তি সালাউদ্দিন ও হারুনকে দেখতে পান।

শাকিল জরুরি কথা আছে বলে ঘরের ভেতরে বসতে চান। ভিকটিমরা তখন শাকিলসহ তার সহযোগীদেরকে সরল বিশ্বাসে তাদের ঘরের মধ্যে বসতে দেন।

পরিকল্পনা মোতাবেক কিছুক্ষণ পর শাকিল হঠাৎ তাদের ঘরে সৌর বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সালাউদ্দিন, শাকিল ও হারুন তিনজন মিলে মা-মেয়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। ধস্তাধস্তির কারণে ভিকটিমরা চিৎকার করতে শুরু করলে শাকিল তার হাতে থাকা দা দিয়ে তাদেরকে কেটে ফেলার ভয় দেখান এবং বাইরে তাদের আরও অনেক লোক আছে বলে হুমকি দেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামিরা কাপড় দিয়ে ভিকটিম মা ও মেয়ের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলেন এবং দুজনকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। আসামিরা ধর্ষণের ঘটনাটি কাউকে জানালে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আসামিরা চলে গেলে ভুক্তভোগী নারী ও তার মেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বিষয়টি জানান। ইউপি সদস্য তাদেরকে চুনারুঘাট থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ভিকটিম বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় শাকিল, সালাউদ্দিন ও হারুনের নাম উল্লেখ করে দুইজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পর অভিযুক্ত সালাউদ্দিন ও শাকিল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান এবং কিশোর হারুনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক গ্রেপ্তার সালাউদ্দিন ও পলাতক শাকিলের অনুপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে নাম-পরিচয় আত্মগোপন করে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন সালাহউদ্দিন। রাজধানীতে ৪-৫ মাস থাকার পর তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন ভুইগড় এলাকায় চলে যান।

এদিকে দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দারের গ্রেপ্তার বিষয়ে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ইপিজেড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন থানায় সশস্ত্র ডাকাতির অভিযোগে মোট ১২টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সর্দার সাইদুর রহমান মানিককে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি সাইদুর রহমান মানিক পটুয়াখালী ও বরগুনার আতঙ্ক সশস্ত্র আন্তঃজেলা ডাকাত দল "মানিক বাহিনীর" সর্দার। তার নেতৃত্বে পটুয়াখালীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় প্রায় ২০টিরও অধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তার বিরুদ্ধে বরগুনা জেলার আমতলী বাজার থানায় ৫টি ডাকাতি মামলা ও ২টি অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। এছাড়াও পটুয়াখালী সদর থানায় ৫টি ডাকাতি মামলাসহ তার বিরুদ্ধে সর্বমোট ১২টি মামলা রয়েছে। মানিক এসব মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।

তিনি বলেন, আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বহুল আলোচিত ২০১৫ সালে পটুয়াখালী সদর থানাধীন মাদারবুনিয়া ও বোতলবুনিয়া গ্রামে একই রাতে তিনটি বসতবাড়িতে ডাকাতির ঘটনাটি তার নেতৃত্বেই ঘটেছিল। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক মানিকের নেতৃত্বে ডাকাত দলের অপরাপর সদস্য নড়াইল শহীদ, নাদ্রা আল আমিন, রাসেল তালুকদার, জব্বার, রাকিব হাওলাদার, আলামিন মাতব্বর, কামাল মাতব্বর, চাঁন হাওলাদার, বশির সরদারসহ ১ থেকে ১২ জন সদস্যের একটি ডাকাত দল মানিকের বাড়িতে বসেই ডাকাতির প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। পরে বোতলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মমতাজের বাড়িতে তারা দেশীয় তৈরি ওয়ান-শুটারগান, রামদা, হাসুয়া, দা, শাবল, ছোরা প্রভৃতি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। তারা প্রথমে লোহার শাবল দিয়ে দরজা ফাঁকা করে বসতবাড়িতে প্রবেশ করেন। বাড়িতে বসবাসরত সব সদস্যকে ঘুম থেকে তুলে মারধর করে একটি কক্ষে এনে চোখ, হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলেন এবং কোনোরকম শব্দ করলে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন। তাদের মধ্যে দুইজন ডাকাত বাড়ির বাইরে পাহারায় থাকেন এবং বাকিরা মানিকের নেতৃত্বে বাড়িতে রক্ষিত নগদ ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং ৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যান।

পরে মমতাজের পার্শ্ববর্তী পাড়ার বাসিন্দা আজিজ মাঝির বাড়িতে লোহার শাবল দিয়ে কৌশলে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। বাড়ির মালিক আজিজ মাঝি, তার স্ত্রী, বোন, দুই ছেলে এবং ছেলের স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে বারান্দায় হাতমুখ বেঁধে উপুড় করে ফেলে রাখে। দুইজন পাহারায় থেকে বাকি সদসারা বাড়িতে রক্ষিত নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে পরবর্তী টার্গেটকৃত বাড়ির দিকে রওনা করেন।

এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনার বিষয়ে জানান তিনি।

মানিক আলিম পাস জানিয়ে তিনি বলেন, চাকরি না পাওয়ায় ২০০৪ সাল হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিজ এলাকায় রাইড শেয়ার করত। তখন তার ডাকাতি কার্যক্রমের অন্যতম সহযোগী নড়াইল শহীদের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে ২০১৫ সালে অবৈধভাবে জনগণের সম্পদ লুট করে অর্থ উপার্জনের লোভে ডাকাতির কাজে জড়িয়ে পড়েন।

ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/এসএস/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :