ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট-ভবন

শেষ সম্বল সতর্কবার্তা, মামলার ক্ষমতা নেই ফায়ার সার্ভিসের

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০২ | প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪৮

আগুনের ঝুঁকি থাকা মার্কেট ও ভবনকে চিহ্নিত ও সতর্ক করার এখতিয়ার থাকলেও মামলা বা কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণের ক্ষমতা নেই ফায়ার সার্ভিসের। এ ক্ষমতা ২০১৪ সালে তাদের দেওয়া হলেও শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাগড়ায় ভেস্তে গেছে সেই উদ্যোগ। এসব শপিংমল বা বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি এ সংস্থাটি কার্যত কাগুজে বাঘ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে বঙ্গবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটকে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ১০ বার নোটিস দিলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ওই নোটিস পাত্তাই দেননি ভবন মালিক বা ব্যবসায়ীরা। আর আইনি দুর্বলতার কারণে সংস্থাটি তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর অগ্নিঝুঁকিতে থাকা মার্কেট, হাসপাতাল ও ভবনের বিরুদ্ধে কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার। গতকাল এক অনুষ্ঠানে এ আভাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেছেন, ঈদের পর অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকা ঢাকার কিছু বিপণি বিতান বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এক বা দুটো বিপণি বিতানকে আমরা মনে করি অনিরাপদ এবং সেখানে আকস্মিক দুর্ঘটনা (ডিজাস্টার) ঘটতে পারে। তাদের বিষয়ে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সালমান এফ রহমান সরকারের তরফ থেকে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দিলেও কোন কোন মার্কেট বন্ধ হবে, সেই নাম বলেননি।

এদিকে রাজধানীতে আগুনের ঝুঁকিতে আছে এমন মার্কেট, শপিংমল, হাসপাতাল, বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। এই তালিকায় গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন, রাজধানী সুপার মার্কেট, কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেট, লিলি প্লাজা, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ ১৩০৫টি মার্কেট ও ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫০টি ভবনকে ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ঢাকা মেডিকেল ও সোহরাওয়ার্দীসহ ৪ শতাধিক হাসপাতালও আছে এ তালিকায়। এসব মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও ভবন মালিকদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠানো শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। পর্যায়ক্রমে এসব ভবনের সব মালিকই সতর্কবার্তা বা নোটিস পাবেন বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে বঙ্গবাজার পুড়ে ছারখার হওয়ার আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল ও ভবন-মার্কেট পরিদর্শন কাজ শুরু করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ দল। তারা সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল ও গাউছিয়া মার্কেটসহ বেশকিছু ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে। আর বঙ্গবাজারকেও ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছিল ২০১৯ সালেই।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, আগুনের ঝুঁকিতে থাকা মার্কেট ও ভবন নিয়ে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অতিঝুঁকিতে থাকা অন্তত ৪৫০টি মার্কেট ও ভবনকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ মার্কেট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনের তালিকা তৈরি করলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনিব্যবস্থা নেওয়া বা ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলার একক ক্ষমতা নেই ফায়ার সার্ভিসের।

জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসকে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বেশকিছু ক্ষমতা দিয়ে ২০১৪ সালে ‘অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩’-এর আওতায় একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু পোশাক প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে ওই গেজেট স্থগিত করা হয়। এরপর অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ওই আইনের বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা অজানা কারণে আটকে আছে। অথচ প্রস্তাব অনুযায়ী সংশোধিত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হলেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করার ক্ষমতা পাবে। তখন তারা অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ‘অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩’-এর একটি বিধিমালা সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। সেটা চূড়ান্ত করে গেজেট হলে ফায়ার সার্ভিস অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মালিকদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে।

তালিকায় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’-এই দুই ধরনের ক্যাটাগরি রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চার মার্কেটের সমন্বয়ে গড়া বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্স ইতোমধ্যেই পুড়ে ছাই। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় আরও আছে কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ভবন-২, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, গুলশান শপিং সেন্টার, জব্বার টাওয়ার, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, ভূঁইয়া ম্যানশন, গুলশান ভবন মার্কেট, গুলশান-২ ডিএনসিসি কাঁচাবাজার মার্কেট, পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বিদিশা সুপার মার্কেট, সাবেরা টাওয়ার মার্কেট, বাইশ বর সুপার মার্কেট, ল্যান্ড মার্ক শপিং সেন্টার, বনানীর গোলাম কিবরিয়া ম্যানশন, বাংলাদেশ ইউএস মৈত্রী কমপ্লেক্স, বারিধারার নতুন বাজার দোকান মালিক সমিতি মার্কেট, মহাখালীর জননী ভবন মার্কেট, শাহীন ম্যানশন, মহাখালী প্লাজা, জেবা টাওয়ার, কারওয়ান বাজারের শাহ আলী টাওয়ার, মগবাজারের বাটা বাজার, বেঙ্গল টাওয়ার, আড়ং প্লাজা, বিশাল সেন্টার শপিংমল, রাজ্জাক প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সসহ অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা এলাকার অর্ধশতাধিক মার্কেট।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, গুলশান টাওয়ার, জব্বার টাওয়ার শপিংমল, পুলিশ প্লাজা, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, গুলশান-১ নম্বরে ডিএনসিসি মার্কেট, বনানী-বারিধারা-ডিএনসিসি বনানী সুপার মার্কেট, সাদ মুসা সিটি সেন্টার ও মেহেদী মার্কেট। এছাড়া আছে কারওয়ান বাজার ২ নম্বর সুপার মার্কেট, কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট, কারওয়ান বাজার কামার পট্টি, হাসিনা মার্কেট, কাব্যকস সুপার মার্কেট, ব্র্যাক আড়ং, প্রগতি সরণির হাজী জমির উদ্দিন সুপার মার্কেট, ফজিলা শপিং সেন্টার, ওয়ারির মুক্ত বাংলা হকার্স মার্কেট, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ভবন-১, খন্দকার ইলেকট্রনিক মার্কেট, শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট, নবাবপুরের আ. রহিম মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার, মজনু হার্ডওয়্যার মার্কেট, পল্টনের বায়তুল মোকাররম মার্কেট, পলওয়েল সুপার মার্কেট, সিটি ভবন, জাহাঙ্গীর শপিং কমপ্লেক্স, রমনা ভবন মার্কেট, মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম মার্কেট, ভলিবল মার্কেট, গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণ, ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট, ডন প্লাজা, নবাব প্লাজা, পীর ইয়ামেনী মার্কেট, বংশালের জাকের সুপার মার্কেট, রোজলীন ভিসতা শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুরের মিরপুর টাওয়ার নার্শি মার্কেট ও ডাসুরা টাওয়ার।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু এই নোটিশ তারা আমলে নেয়নি। যতক্ষণ না এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের সংশোধন না করবে ততক্ষণ বঙ্গবাজারের মতো আরও অনেক ঘটনার জন্ম হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১০ এপ্রিল/আরআর/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :